নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তীব্র সিট সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে রোগীরা। প্রতিদিনই রোগীরা বেড না পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব রোগীর একদিকে দুর্ভোগ এবং অন্যদিকে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি ও খরচ। বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগীদের কষ্ট অনেক। হঠাৎ স্ট্রোক বা দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়া এসব রোগী আসার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিট খালি নাই বলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিনো হচ্ছে। ৫০০ সিটের এই হাসপাতালের সিটগুলো থাকে কানায় কানায় পূর্ণ।
মাঝেমধ্যে একটি বা দুইটি সিট খালি হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা। সিট পাওয়ার আশায় তদবির করান নেতা-সচিব ও প্রভাবশালীদের দিয়ে। আবার কোনো কোনো রোগীর সিটের জন্য হাসপাতালে পৌঁছার আগেথেকেই আত্মীয়-স্বজনরা তদবির শুরু করতে থাকেন। কখনো হাসপাতালে হাজির হয়ে, কখনো বা ফোনে। সিটের জন্য সবথেকে বেশি ঘুরতে হচ্ছে ব্রেন টিউমারের রোগীদের। এই রোগীদের অপারেশনের জন্য ভর্তি হতে বহির্বিভাগে একটি সিট পেতে কখনো একমাসও লেগে যায়। সিটের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার কারণে ব্রেন টিউমারের রোগীদের রোগ জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। আবার তাৎক্ষণিক সিট না পাওয়ায় মারাত্মক জীবনঝুঁকিতে পড়ছে হঠাৎ স্ট্রোক বা দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়া মরণাপন্ন রোগীরাও। ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখানে আসার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্য হাসপাতালে পাঠালেও যানজটে পড়ে কিংবা অন্যকারণে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় জীবন শঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের যাবতীয় মাথার সমস্যার রোগীদের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র এই হাসপাতাল। আর তাই ব্রেন স্ট্রোক, দুর্ঘটনায় আঘাত, ব্রেন টিউমার ও মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দিলেই ঢাকাসহ গ্রাম-গঞ্জ থেকে রোগীরা ছুটে আসছে হাসপাতালটিতে। এতে দিনে দিনে ভিড় বাড়লেও, বাড়ছে না সিট। আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো মেঝেতে ভর্তির সুযোগ না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি ও মৃত্যুঝুঁকি বেড়েই চলছে।
গতকাল হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে সিট খালি না থাকায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ওই রোগীর আত্মীয় হাসপাতালের মেঝেতে ভর্তির অনুরোধ করেন। চিকিৎসক বললেন উপায় নেই। অবশেষে যেতেই হলো রোগীটিকে। নিউরো সাইন্স হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান মেহবুব জানান, এমনিতেই সিট কম, তারপর আবার ব্রেন টিউমার রোগীদের অপারেশনে সময় বেশি লাগছে।
তাতে দেখা যাচ্ছে সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একটির বেশি অপারেশন করা কঠিন। তাই সিটও খালি হচ্ছে কম। রোগীর চাপ বাড়ছে। সিট কম হওয়ায় এবং রোগীর ভিড় বেশি থাকায় একই চাপ নিউরো মেডিসিনের রোগীদের ক্ষেত্রেও। এই চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অবস্থায়ই রোগীদের কাউকে ভর্তি করে, কাউকে ভর্তি না করেই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হচ্ছে। তিনি বলেন অনেক সময় সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও সিট খালি না হলে মেঝেতে ভর্তির নিয়ম না থাকায় অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে সিটের সংকট কিছুটা হলেও কমানোর চেষ্টা চলছে আরেকটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের মাধ্যমে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কমমূল্যে ভালো চিকিৎসা এবং নামকরা চিকিৎসকদের সেবার কথা জেনেই মাথার সমস্যার রোগীরা অন্য হাসপাতালের তুলনায় এই হাসপাতালে ভিড় করছে বেশি। এছাড়া এখানে শুধু নিউরো এবং স্পাইন চিকিৎসা দেওয়ার কারণেও রোগীর এত উপস্থিতি। নিউরোসার্জারি বা মাথার একটি অপারেশনে এ হাসপাতালে খরচ হয় বড়জোর ৫০ হাজার টাকা। একই অপারেশন প্রাইভেট হাসপাতালে তিন থেকে ৫ লাখ এবং বিদেশে ৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।