শহিদুল ইসলাম খোকন, গাইবান্ধা:
নদীতে তেমন পানি নেই, স্রোতও কম, তবুও ভ্ঙান, নদীর গতিপ্রকৃতি দেখে এখন বোঝা মুশকিল ভ্ঙান হবে কি না-এমন অভিমত ব্যক্ত করেন চর দিঘলকান্দি গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মফিজ উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, আগে নদীর পানি ও স্রোত দেখে নদীভ্ঙানের তীব্রতা নির্ণয় করা যেতো, কিন্তু এখন সেই ধরনা ও অনুমান কাজে লাগছে না। তিনি আরো জানান, অগ্রায়ন মাসে নদীভ্ঙানের বিষয়টি ভাবাই মুশকিল ছিল, অথচ এই সময়ে এসে ভ্ঙানের শিকার হয়ে বাড়িঘর টানতে হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১০টি পয়েন্টে এখনও থেমে থেমে নদীভ্ঙান চলছে। গত একমাসে এই চার উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভ্ঙান প্রতিরোধে কোন পদক্ষেপ না থাকায় আতংকে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
সাঘাটার দক্ষিণ দিঘলকান্দি চরের শাহজাহান প্রামানিক জানান, গত সপ্তাহে নদীভ্ঙানে ঘর সরিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। বন্যার সময় নদীভ্ঙান থেমে ছিলো, কিন্তু পানি কমার সাথে সাথে ভ্ঙানের তীব্রতা বেড়ে এই গ্রামের আরো ৪০টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে বলে তিনি জানান। এই গ্রামের নুর ইসলাম প্রামানিক বলেন, সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে উঠতি বেগুন ও মরিচ ক্ষেত। ধারদেনা করে মরিচ ও বেগুন চাষ করেছিলাম, কিন্তু নদীভ্ঙানে সব শেষ হয়েছে। তিনি বলেন ভাবছিলাম আরো হয়তো দু’তিন বছর থাকতে পারবো, কিন্তু তা তো আর হলো না।
ফুলছড়ি উপজেলার দেলুয়াবাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোল্লা জানান, আগের নদীর স্রোত দেখে ধারনা করা যেতো নদীভ্ঙানের মতিগতি। তবে কেন যেন তা আর কাজে লাগছে না।
গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ও নদী গবেষক এম. আবদুস্ সালাম জানান, নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তিনি মানুষকে দায়ী করে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নদীভ্ঙানের তীব্রতা বাড়ছে। এতে করে মানুষজন প্রস্ততি না নিতে পারায় অর্থনৈতিভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
জলবায়ু গবেষক ড. আইনুন নিশাত জানান, এখন ধারনা নির্ভর প্রকৃতি আর নেই। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী ও চরের মানুষজন। বন্যার পানির সাথে মাটি, স্রোতের তীব্রতা, পিপড়ার চলাফেরা, বাতাস প্রবাহ- এসব নানা কিছু থেকে সাধারণ মানুষ অনুমান করতো জমিতে শস্য উৎপাদন, নদীভ্ঙান অথবা বন্যা আগাম পূর্বাভাস। কিন্তু এগুলো এখন খুব বেশি কাজে আসছে না বলে তিনিও জানান। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তাতে করে আরো অনেক কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, এজন্য তিনি জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।
এদিকে, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, চরাঞ্চলে ভ্ঙান প্রতিরোধ স্থায়ী পদক্ষেপের প্রকল্প এখনও সরকার গ্রহণ করেনি, তবে পরিকল্পনায় আছে।