সিলেট ব্যুরো
গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে থাকার সাড়ে ৭ ঘন্টা পর মুক্ত হলেন সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা চৌধুরী। গত বুধবার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত হন। ফারহানা চৌধুরী পূবালী ব্যাংক সিলেট কদমতলী শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা।
এরআগে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খবর পেয়ে নগরীর শাহজালাল উপশহরের ই-বøকের ১নং সড়কের ২১ নম্বর বাসার বাথরুম থেকে গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ইমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। তবে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারহানা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহপরাণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা ওই মেয়েকে এবং গৃহকর্তীকে থানার নিয়ে এসেছিলাম। মেয়ের সাথে কথা বলেছি। এমনকি নারী পুলিশ দিয়ে তার শরীর পরীক্ষা করিয়ে কোথাও নির্যাতন কিংবা আঘাতের কোন আলামত পাইনি। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছি- সে কেন এমন করলো? তখন সে বলেছে- তার এখানে থাকতে ভালো লাগে না। সে তার বাড়িতে চলে যেতে চায়। তাই সে কাজ করে না। আর কাজ না করলে গৃহকর্তী যিনি তিনি তাকে বকাঝকা করেন।
ওসি আরও বলেন, আমরা গৃহকর্তীরও বক্তব্য নিয়েছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন উনার অনুপস্থিতিতে ওই মেয়ে তাঁর বাচ্চাকে মারধর করতো। অনেক সময় শরীরে মরিচ লাগিয়ে দিতো। কিন্তু বাচ্চা অনেক ছোট হওয়ায় তেমনটা বলতে পারত না। শুধু বলতো তার শরীর জলে। আজও সে তাঁর বাচ্চার শরীরে মরিচ লাগিয়েছে। পরে বাসায় এসে তিনি মেজে মরিচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখে বকাঝকা করাতে সে বাথরুমের ভিতর ঢুকে কান্না শুরু করে। এসময় তিনি বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে ভয় দেখিয়ে বলেছেন আজ তোকে পুলিশে দিবো। তাতে সে চিৎকার শুরু করেছে। তাই আমরা একটি লিখিত রেখে গৃহকর্তীকে ছেড়ে দিয়েছি। কাজের মেয়ের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে আবার তাদের বাসায় যাবে কি না, তখন সে বলেছে যাবে না। তাই তার বাবার সাথে যোগাযোগ করে তাদের আনিয়েছি। তার বাবা আর স্থানীয় চেয়ারম্যান এসেছিলেন। এসে তাদের কোন অভিযোগ না থাকায় গৃহকর্তী ফারহানা চৌধুরীকে উনার স্বামীর জিম্মায় দেওয়া হয়েছে আর ওই মেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার পরপর গৃহকর্মী রুনা আক্তার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলে, গত মাসে আমি এসেছি। প্রথমে আমাকে কোন মারধর করা হয়নি। কিন্তু কিছুদিন গেলে আমি আমার বাড়িতে ফোন করতে চাইলেও দেওয়া হতো না। ফোন করতে চাইলেই আমাকে মারধর করা হয়। আজ আমি আমার বাড়িতে ফোন দিতে চাইলে আন্টি আমাকে মারধর করেন। তখন আমি কান্না শুরু করলে তিনি আমার মাথার উপর মরিচের গুড়া ঢেলে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করেছে। এমনকি ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী এক প্রতিবেশী জানিয়েছিলেন, ফিরোজা মঞ্জিলের ৪র্থ তলায় থাকেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক। বিকালে তার স্ত্রী গৃহকর্মীকে মারধর করেন। এসময় বাসার নিচ থেকে তার ব্যাপক চিৎকার ও কান্নাকাটি শুনা যায়। তখন পুলিশে খবর দেওয়া হয়। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে গৃহকর্তী ফারহানা চৌধুরী জানিয়েছিলেন, সে গত মাসের ২২ তারিখ আমার বাসায় কাজে আসে। আসার পর থেকে চলে যেতে কান্নাকাটি শুরু করেছে। কিন্তু আমার বাসায় কাজে মেয়ে না থাকায় তাকে বলি আপাতত থাকতে। কিন্তু কয়েকদিন পর থেকে সে তার সাথে জিন-ভূতের সমস্যা আছে এবং দিনে তার সমস্যা হয় বলে জানায়। আজও সে এরকম করে এবং আমার বাচ্চাকে মারধর করে বাথরুমে প্রবেশ করে। সে নিজে চিৎকার চেঁচামেচি করেছে। আর বাইরে থেকে তাকে বাথরুম থেকে বের করতে আমি চেঁচামেচি করেছি। আমি দরজা লাগাইনি। কিন্তু তার চিৎকারে সকলে মনে করছেন মারামারি করেছি। এদিকে ঘটনার পর পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম সাংবাদিকদের জানান, আমি ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের সহযোগিতায় ওই মেয়েকে বাথরুম থেকে উদ্ধার করি।