মো: জহিরুল ইসলাম, গাজীপুর:
দুর্নীতি, অনিয়ম করেও এক রহস্যময় শক্তিতে সব আমলেই বেকসুর খালাস! আমলনামায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চুরিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সুদীপ বসাককে চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বদলি করা হয় ২০২২ সালে। দুর্নীতির চাদরে মোড়ানো তত্তবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক। এ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্তবধায়ক প্রকৌশলী ও যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে উঠে আসে প্রকল্পে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অবৈধ নিয়োগসহ কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। বর্তমানে তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (যান্ত্রিক, পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ) বিভাগের তত্তবধায়ক প্রকৌশলী। এখানেও তিনি নানা সময়ে মেয়রদের আস্থা কুড়িয়ে দোসর হয়ে করছেন সীমাহীন দুর্নীতি।
অনুন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে যান্ত্রিক শাখায় (পুল) উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন সুদীপ বসাক। পরে ২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর তাকেসহ আরও পাঁচ উপ-সহকারী প্রকৌশলীর চাকরি নিয়মিত করা হয়। যা ছিল একপ্রকার চাকরিবিধি লঙ্ঘন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটির এক প্রকৌশলী বলেন, নিয়ম অনুয়ায়ী তার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি ওই পদে অধিষ্ঠিত হন তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কেননা এখন তিনি যে পদে রয়েছেন সেটিতে থাকার মতো যোগ্যতা তার নেই। এক অদৃশ্য শক্তিতে তিনি পদগুলো বাগিয়ে নেন।জানা যায়, সুদীপ বসাক ২০০৬ সালে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী যাকে বলে (নো ওয়ার্ক নো পে) চাকরিতে প্রবেশ করেন। বিধিবহির্ভূত অগ্রোনোগ্রাম ছাড়াই চসিকে অস্থায়ী (মাস্টাররোল) কর্মচারী হিসাবে অবৈধ নিয়োগপত্রে ২০০৯ সালে ৩০ নভেম্বর যোগদান করেন। পরে ১২ দিনের মাথায় চসিকের সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা সুদীপ বসাক গাছ চুরির ১নং এজাহারভুক্ত আসামি হলেও চাকরি যায়নি। চসিক বিধিবহির্ভূত নিয়োগপত্রে দুই বছর চাকরিকাল শিক্ষানবিশ সন্তোষজনক হলে চাকরি স্থায়ী করা হবে লিখিত থাকলেও তার চাকরি যায়নি। বরং চসিক বিধিবহির্ভূত সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে নিয়োগবিধি-১৯৮৮ ছাড়াই নিয়োগ কমিটি, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও সুপারিশ ছাড়াই সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে পদোন্নতি পান। এটি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ পদোন্নতির বিপরীতে মো. আনু মিঞা হাইকোর্টে রিট পিটিশনে পদোন্নতি স্থগিত করার রায় প্রদান করা হলেও চসিক সুদীপ বসাককে পদোন্নতি পাইয়ে দেয়। এদিকে গাসিকের মাস্টাররোল কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়, প্রশাসক, সিইও ও সচিবকে সম্মানি হিসাবে দেওয়ার জন্য এক হাজার ২২৫ জনের কাছ থেকে সম্মানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে। পরে সে সম্মানির টাকা কয়েকজনের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। যেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র স্মারক অনুসারে আউট সোর্সিং ছাড়া কোনো অস্থায়ী/দৈনিক ভিত্তিতে/মাস্টারোলে নিয়োগ যেভাবেই বলি না কেন, এ ধরনের নিয়োগ না করার নির্দেশনা থাকলেও মাস্টাররোল কর্মচারী এক হাজার ২২৫ জনের একটি ভৌতিক লিস্ট স্থায়ী করার জন্য মো. আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত পত্রে স্থায়ী করার অনুরোধ করেন। আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওয়াকিটকি ক্রয়ের নামে ভুয়া দরপত্রের মাধ্যমে দারাজ অথবা আলিবাবা সামাজিক ক্রয় প্লাটফর্মে সার্চ দিলে দেখা যাবে যে ওয়াকিটকির দাম চার হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকা সে ইকুভেলেন্ট আইটেম ৮৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে, যা আ.লীগ সরকারের সমুদ্র চুরির মতো। আবার দেখা যায়, টোটাল এক্সেসরিস থেকে কোটি কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় কালিসহ ইলেকট্রনিক মালামাল ক্রয় করা হলেও সুদীপ বসাক নির্বাহী প্রকৌশলী যান্ত্রিক/তত্তবধায়ক প্রকৌশলী পদের নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জয়দেবপুর শাখায় কোটি কোটি টাকার চেক ইস্যু করে কাজ না করে ভান্ডারে স্টোরভুক্ত করে বিতরণ দেখানো হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সফিউল আজমের যোগসাজশে মেয়র জায়েদা খাতুনের আমলে বিভিন্ন খাতের কোটি টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারে লুটপাট করেছেন ভুয়া ভাউচারের প্রধান মাস্টারমাইন্ড চট্টগ্রাম থেকে দুর্নীতির দায়ে বদলি হয়ে আসা এ সুদীপ বসাক। এদিকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারীর কীভাবে নিয়োগবিধি ছাড়াই ১০ বছরে চসিকে তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে পদোন্নতি হলো, তার অবৈধ নিয়োগপত্র ও পদোন্নতি বাতিল, নিয়োগকারী ও পদোন্নতি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, চসিক ও গাসিক-এ অবৈধ চাকরিকালীন সময়ে সরকারি বেতন-ভাতাদি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে তার বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের (বিভাগীয় কমিশনার) কাছে অভিযোগ করে ছিলেন এক ব্যাক্তি। অভিযোগের বিষয়ে জানাতে সুদীপ বসাককে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।