মো. মোস্তফা খান(নরসিংদী):
নদীর বুক জুড়ে ভেসে আসছে ঢাকের তাল, কাশফুলের দোলায় শরতের ছোঁয়া, আর ঘাটে ভিড় জমাচ্ছে কৌতূহলী মানুষ। চরাঞ্চলের শান্ত গ্রাম যেন হঠাৎই উৎসবের শহরে পরিণত হলো। দূরে নদীর দিগন্তে দেখা গেল সাদা ঢেউ কেটে আসছে একে একে স্পীডবোর্ডের বহর। মুহূর্তেই সবার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে উঠল- এ যেন নদীপথে শোভাযাত্রা।
অর্ধশতাধিক স্পীডবোর্ডের এই মহাযাত্রা নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল।সোমবার বিকালে তিনি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রবেশ করেন দুর্গমচরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়নের শারদীয় দুর্গোৎসব পূজামন্ডপে। সোমবার রাত ১০ টা পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় তিনি মির্জাচর পুর্বপাড়া পুজা মন্ডপ, মির্জাচর ইউনিয়ন পুজা মন্ডপ, ছাটাবন পুজা মন্ডপসহ বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শণ করেন তিনি। ঢাকের শব্দে মুখরিত, আলোয় ঝলমল করা প্রতিটি মন্ডপে তিনি প্রবেশ করেন হাসিমাখা মুখে, আয়োজকদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন এবং ভক্তদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
চরের মানুষজন এ দৃশ্যকে দেখেছেন উৎসবের ভিন্নরূপ হিসেবে। শিশুদের চোখে বিস্ময়, নারীদের মুখে হাসি, আর প্রবীণদের কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা।স্থানীয়দের অনেকেই বললেন, আমরা নদীর মাঝে বিচ্ছিন্ন। এত বড় বহর নিয়ে কোনো নেতা আগে আসেননি। আজ মনে হচ্ছে, আমরাও দেশের উৎসবের অংশ।ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রতিটি মন্ডপে গিয়ে বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের ঐতিহ্য, এটি ভ্রাতৃত্ব ও স¤প্রীতির প্রতীক। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা সবাই মিলেই এই সমাজকে এগিয়ে নিতে চাই।
স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, শ্যামলের এ সফর শুধু আর্থিক অনুদান নয়, বরং এক ধরনের প্রেরণা। তার এ আগমন যেন দূর্গম চরাঞ্চলের মানুষের মনে নতুন আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে।
নদীর বুক চিরে যখন আবার ফিরতে শুরু করল অর্ধশত স্পীডবোর্ড, তখন পুরো চরাঞ্চল ভরে উঠল হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানোর দৃশ্যে। শিশুরা দৌড়ে বেড়িয়েছে বাঁধের উপর, নারীরা ঘাটে দাঁড়িয়ে কণ্ঠ ছড়িয়ে দিয়েছে আনন্দধ্বনি।সেদিন চরাঞ্চলের আকাশে শুধু পূজার আনন্দই নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল স¤প্রীতির রঙ। শ্যামলের এই সফর তাই শুধু পূজামন্ডপ ঘোরা নয়- এ যেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে কাছে টেনে নেওয়ার এক উৎসবের গল্প।