নেছারাবাদে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য ও সরকারি অনুদান আত্মসাৎ করে লাপাত্তা প্রধান শিক্ষক

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

খেলাফত হোসেন খসরু, পিরোজপুর:

পিরোজপুরের নেছারাবাদে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সরকারি অনুদান ও শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নন-এনডিডি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসব অনিয়ম করেছেন আমির হোসেন।

উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১ মার্চ ২০১৬ সালে নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ি নামক প্রত্যন্ত গ্রামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নন-এনডিডি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির জন্য জিরবাড়ী প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নামে আবেদন করা হয়। প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একই গ্রামের মোঃ আমির হোসেন।

খাতা কলমে শিক্ষকের সংখ্যা ২১ জন, কর্মচারীর সংখ্যা ১৭ জন, ভ্যানচালকের সংখ্যা ২ জন ও শিক্ষার্থী আনয়নের জন্য ২টি ভ্যানগাড়ী থাকার কথা রয়েছে। তবে বাস্তবে বিদ্যালয়টির চিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষকরা জানান, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী ৩২ জন শিক্ষক নেয়ার কথা থাকলেও সেখানে নিয়োগ বাণিজ্যর মাধ্যমে শিক্ষক আমির হোসেন নামমাত্র মনগড়া শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে করেছেন ২ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য। এভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ সহ কর্মচারি নিয়োগে প্রতিটি চাকরির পদ অনুযায়ি ঘুষ নিয়ে গত ৫ আগষ্টের পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমনকি এসময় তিনি বিদ্যালয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্রয় করা ২টি কভারভ্যান গোপনে বিক্রি করে ফেলেছেন। ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতি করে তার আত্মগোপনের পর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ওই বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ে তার সীমাহীন দূর্নীতির পরে নতুন করে তিনি যাতে প্রতিষ্ঠানটির কোন কিছু বিক্রি করতে না পারে সেই ভয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে ক্রয়কৃত জমি ও অন্যান্য আসবাবপত্র পাহারা দিচ্ছেন প্রতারিত শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে আমার কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে প্রথম ধাপে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরবর্তীতে বিএসএড পরীক্ষার কথা বলে আরো ২৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ ফিরোজ কিবরিয়া জানান, প্রধান শিক্ষক মোঃ আমির হোসেন ছিল অর্থ পিপাসু প্রতিষ্ঠানের কথা কোনো সময়ই ভাবেনি। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৭ (সাত) মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত আছেন। তাকে ফোন করলেও ফোন রিসিভ করছেন না। তিনি নিয়োগের সময় আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা আদায় করে কাউকে হিসাব দিত না।

এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ জাহারুল ইসলাম বলেন, এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল হইতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মোঃ আমির হোসেন এককভাবে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের নামে একটি যৌথ ব্যাংক একাউন্ট থাকলেও লেনদেন করত তার ব্যক্তিগত একাউন্টে। নিয়োগ সংক্রান্ত লেনদেন ও অফিসিয়াল ডকুমেন্টস সম্পর্কে তথ্য আমাকে কিছুই জানাতো না।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আমির হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমি যা করেছি বিদ্যালয়ের স্বার্থেই করেছি। বাকি সব অভিযোগ মিথ্যা।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তপন বিশ্বাস জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত চলমান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: রায়হান মাহামুদ জানান, বিষয়টি একটি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement