খেলাফত হোসেন খসরু,পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুর জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন তালুকদার কুমারকে বেআইনীভাবে থানায় ৩৮ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পর অস্ত্র দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার অভিযোগে পিরোজপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউর রহমান এবং সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেনসহ ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার দুপুরে শুনানী শেষে বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২৮ আগস্ট জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন তালুকদার কুমার পিরোজপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়েরর পর শুনানী শেষে বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাঃ হেলাল উদ্দিন এ আদেশ দেন। মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, সদর থানার সাবেক সেকেন্ড অফিসার এসআই মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং ইন্সপেক্টর মোঃ জুলফিকার আলী। এছাড়া আরও ৪-৫ জনকে এ মামলায় অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে কুমার উল্লেখ্য করেন, ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পিরোজপুর পৌরসভাধীন উত্তর কৃষ্ণনগর বাড়ির সামনের রাস্তার উপর থেকে সাদা পোষাকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে আটক করে। এরপর রাত ১২ টার দিকে তাকে টহল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরের দিন ভোরবেলা পুলিশ সদস্যরা হাতকড়া পড়ানোর পর কালো কাপড় দিয়ে তার দুই চোখ বেধে ফেলে। এরপর মামলার প্রধান আসামী সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেন থানার গারদের সামনে তাকে বেত দিয়ে মারাত্মকভাবে পিটাতে থাকে। ২-৩ মিনিট পিটানোর পর কুমার নিস্তেজ হয়ে পড়লে আবির তাকে পা দিয়ে পাড়াতে থাকে। ওই দিন থানায় আটক থাকা সকলকে আদালতে পাঠানো হলেও, কুমারকে থানায় রাখা হয়। এরপর তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে এই ধরণের স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য আবির তাকে চাপ দিতে থাকে। তাতে রাজি না হওয়ায় প্রচন্ড শীতের মধ্য খালি গায়ে থানার গারদের মধ্যে কুমারকে শুইয়ে রাখা হয়। এরপর ওই দিন রাতে পুনরায় হাতকড়া পড়িয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে তার বাড়ির কাছে একটি কবরস্থানে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর সেখান থেকে একটি অস্ত্র বের করে সেটি কুমারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে পুলিশ। পরবর্তীতে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দিয়ে কুমারকে পরের দিন আদালতে পাঠানো হয়।
কুমার জানান, তাকে থানার মধ্যে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় আসামী করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। দীর্ঘ ৪ মাস কারাভোগের পর সে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। পুলিশের মত একটি দায়িত্বশীল বাহিনীতে আবিরের মত অসৎ কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের বিচার পাওয়া জন্য তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে কুমারের আইনজীবী আকরাম আলী মোল্লা জানান, গত ২৭ আগস্ট মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। বুধবার শুনানী শেষে বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে। তার দাবি এ মামলা সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বাদী ন্যায় বিচার পাবে।