বরিশাল প্রতিনিধি:
প্রকৌশল, প্ল্যান ও বাজার শাখায় লুটপাটের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) একাধিক দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে সক্রিয় হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুদক বরিশাল সমন্বিত কার্যালয় থেকে ১৮ কর্মকর্তাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১২ জনকে রাখা হয়েছে বিশেষ নজরদারিতে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশল, সার্ভে, প্ল্যান, ট্রেড লাইসেন্স ও বাজার শাখায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উন্নয়নকাজে অনিয়ম, দরপত্রে দুর্নীতি, সরকারি অর্থ বরাদ্দে গড়মিল, ল্যাপটপ ও ড্রোন ক্রয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, এমনকি ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা ফেস্টুন স্থাপনেও অনিয়ম হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
তদন্ত করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কাইউম হাওলাদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রকৌশল শাখায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকায় সেখানে দুর্নীতির সুযোগ বেশি। শাখাটির দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হুমায়ুন কবির ঠিকাদারদের কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।”
এছাড়া হাট-বাজার শাখার তত্ত্বাবধায়ক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও দোকান দখল ও ভাড়াটিয়াদের হয়রানির লিখিত অভিযোগ পেয়েছে দুদক। অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম নিজে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চাকরি করতে পারিনি। এখন কাজ করছি বলে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”
সার্ভে ও প্ল্যান শাখায় ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও উঠে এসেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্ল্যান দাখিলের সময় ছাড়পত্র দিতে গিয়ে সার্ভেয়াররা উৎকোচ নেন, যা ভাগাভাগি হয় সংশ্লিষ্ট শাখার ভেতরেই। প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্ল্যান সহকারী এবং একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
দুদকের নোটিশ পাওয়া প্ল্যান সহকারী কাল্টু বলেন, “আমি নোটিশ পেয়েছি, ১০ জুলাইয়ের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে নোটিশে কী চাওয়া হয়েছে, তা বলা গোপনীয় বিষয়।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সনাক) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, “অভিযোগ যেহেতু এসেছে, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তবে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়েও দুদককে সচেতন থাকতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, “দুদকের চিঠি নিয়মিতই আসে। যারাই নোটিশ পেয়েছেন, তারা আইনি প্রক্রিয়ায় জবাব দেবেন।”তবে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কাইউম হাওলাদার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।