সানোয়ার আরিফ, রাজশাহী :
উত্তরবঙ্গের প্রানকেন্দ্র রাজশাহী জেলার বরেন্দ্রভূমি জনপদ অঞ্চল গোদাগাড়ী। গোদাগাড়ী উপজেলা সদর সংলগ্ন বহমান পদ্মানদী।এদেশের অন্যতম প্রমত্তা পদ্মা নদী রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীকে সারা দেশে এনে দিয়েছে ব্যাপক পরিচিতি । পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গানদীর প্রধান শাখা । এটি বাংলাদেশের তিন প্রধান নদীর একটি।
পদ্মা নদী এই উপজেলার মানুষের জীবন-জীবিকা রক্তের সাথে মিশে রয়েছে। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে, আবাদী ফসল, নদীতে সারা বছর জেলেদের মাছ ধরা এ উপজেলার পদ্মা পাড়ের জন জীবনকে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। চরের মানুষের জীবন যেন ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
পদ্মা নদীর এই চরে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস, বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই আস্তে আস্তে যেন নদীর বুকে চর জেগে উঠে। যে দিকে দূচোখ যায় ধু ধু বালু চর। এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম মৎস্য শিকার। নদীর বুকে ছোট্ট নৌকায় মাছ ধরে যেন জীবন কাটে চরের ভাসামান মানুষের ।
ভাঙা-গড়ার খেলায় পদ্মা যেমন অগ্রগামী তেমন সম্পদে ভরপুর এ নদী । জেলেদের জালে পদ্মার রূপালী ইলিশ যখন ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে খুঁশির বন্যায় পুরো জেলে পাড়ায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় । এমন আরও কত মাছের সমাহার যে পদ্মার নদীতে আছে । বিশাল আঁইড়, বোয়াল, পাঙ্গাস, চিতল, রুই, কাতল, পাবদা, চিংড়ি, বাসপাতা, বেঁলে, ঘাউরা, বাইন ও রিটা সহ অনেক প্রজাতির মাছ এ নদীর গুরুত্ব বহন করে চলেছে।
পদ্মা নদীর প্রবল পদ্মার ঢেউয়ের সঙ্গে ছিল যাদের নিয়মিত যুদ্ধ এখন তাদের চোখে সবুজ রঙের স্বপ্ন। এখন পাল্টে গেছে তাদের জীবিকার সংগ্রাম। তারা এখন পদ্মা পাড়ের চরে চাষ করছে সোনালী ফসল। নদীর ভয়াল থাবা থেকে নিজেদের উত্তোরণ ঘটিয়ে নদীর পাড় ও ধুধু বালুচরে সবুজ ফসলের সমারোহ পাল্টে নিয়েছে চরের মানুষের ভবিষ্যৎ।
উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমে গোদাগাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার বিশাল অংশ বালুচরে পরিণত হয়েছে। এ পরিবর্তন পদ্মার সঙ্গে মিশে থাকা নদীপাড়ের মানুষের জীবন, জীবিকা আর পরিবেশকে হুমকিতে ফেলেছে।
যে নদীতে এক সময় পাল তোলা নৌকা চলতো সে নদীতে এখন নৌকা চলে সীমিত সংখ্যায়। যন্ত্রচালিত বাহনে বিশাল নদী পারি দিয়ে নদীর তীরে এসে যাত্রীদের নৌকায় চড়তে হয়। নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় নদীপাড়ের মৎস্যজীবীরা এখন কর্মহীন। অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন।
চরদখল নিয়ে লাঠালাঠির খবর এখন আর তেমন শোনা যায় না। সেখানে এখন নতুন প্রাণের ছোঁয়া।এই উপজেলার পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরগুলোও এখন ফসলে ভরে ওঠে প্রতিবছর।
অন্যদিকে পদ্মা নদীর তীর অসাধারণ মনোরম জায়গা। অরণ্য, সবুজ আর কাঁদা মাখা জলধারায় মোড়ানো গোদাগাড়ী পদ্মার চর। এখানে একই সঙ্গে আপনি উপভোগ করতে পারবেন নদীর রিম ঝিম ,কোমল বাতাস,আর জেলেদের মাছ ধরা, পদ্মা নদীতে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা।
দিনের বিভিন্ন সময়ে পাখিদের আনাগোনা ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য । সবুজ, নির্মল বাতাস, নির্জন অরণ্য, পাখির গান, জন্মভুমির স্বদেশ প্রকৃতির ঘ্রাণ, নদীর বুকে বছর ধরে জেলেদের জালে ধরা পড়া বিভিন্ন মাছের সমাহার, বৃষ্টির দিনে নদীতে শিশিরের টুপটাপ শব্দ, জুম ঘরে অনবরত ঝরে পড়া বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দ, নানা রঙের মেঘেদের অবহেলায় উড়ে বেড়ানো, দিয়ারা চরের উপর চরের সিঁড়ি, বৃষ্টির গান, রোদের ঝিলিক, তাদের জন্য পছন্দের জায়গা গোদাগাড়ীর এই পদ্মা নদীর চর।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা রাজশাহীর গোদাগাড়ী এই পদ্মার উত্তর তীরে অবস্থিত। পদ্মার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,৫৭১ ফুট (৪৭৯ মিটার) এবং গড় গভীরতা ৯৬৮ফুট (২৯৫ মিটার)।