সেলিম শেখ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তÍত ১০ জন আহত হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের স্থানীয় চায়না কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২), মোজাম্মেল হোসেন (২৩) ও জুবায়ের রহমান সাকিবকে (২৩)। এর মধ্যে মোস্তাকিম রহমান মাহিন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। গুরুতর আহত মোজাম্মেল হোসেন (২৩) ও জুবায়ের রহমান সাকিবকে (২৩) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষনা করেন। আহত ৬ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ^বিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাথী। আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের স্থানীয় চায়না কারখানার সামনে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ^বিদ্যালয়ের ৪০০ শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মাটির মায়া রিসোর্টে বনভোজনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় বিআরটিসির দ্বিতল বাস পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১১ হাজার কেভি লাইনের স্পর্শে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১০ ছাত্র আহত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আফসার উদ্দিন (৭০) জানান, গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের সাড়ে ৪৬০ জন শিক্ষার্থী ওই এলাকার মাটির মায়া রিসোর্টে ৬টি বিআরটিসি দোতলা বাস এবং তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে পিকনিকে আসে। তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে পৌছা মাত্র সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভেল্টেজের লাইনে ৫ নাম্বার বাস (নং ঢাকা মেট্রো ব -১৫৭০৩৮) বিদ্যুতায়িত হয়। এসময় দুই ছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। আহতদের প্রতেকেই শরীরের বিভিন্ন অংশ বিদ্যুতায়িত হয়ে কারো হাত, কারো পা, কারো মুখ ঝলসে যায়।
অপর প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আহমেদ, রুবলে মিয়া ও জাকির হোসন জানান, ৫টি বাস রিসোর্টে চলে যায়। সব শেষের বাসটি সড়কের পাশের ১১ হাজার ভেল্টেজের লাইনে বিদ্যুতায়িত হলে পুরো বাস বিদ্যুতাতি হয়। এসময় বাস থেকে দোঁয়া বের হতে থাকলে ছাত্ররা চিৎকার শুরু করে। আমরা তাদের চিৎকার শুনে বাসের কাছে যাই। এসময় তিনজন ছাত্র বাস থেকে নেমে বের হওয়ার চেষ্টা করলে যেতে না পেরে একজনের মৃত্যু হয়। অপর দুইজনকে শুকনা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে শরীর আলাদা করি। পরে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ বন্ধ করতে বললে তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তা না হলে আরো ছাত্র মারা যেতো।
তারা জানান, যে বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়েছে সেটা নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পর তারা ওই বাসের ভিতরে গেলে মদের গন্ধ পান। মদের গন্ধের কারণে ওই বাসে তখন উঠাই যাচ্ছিল না। সাংবাদিকেরা ভিডিও এবং ছবি উঠানোর সময় শিক্ষার্থীরা তাদের মোবাইল এবং ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার চেষ্ট করে। এসময় শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদেরকে আক্রমন করতে এগিয়ে আসলে এলাকাবাসী বাধা দিলে তারা সরে যায়।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ^বিদ্যালয়ের পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাফিসা আরেফিন এবং বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি রাকিবুল ইসলাম তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটিতে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা আক্তারকে প্রধান করে চার সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার মাহমুদুল হাসান এবং অপরজনের নাম জানা যায়নি।
অপরদিকে, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এবং ইলেক্ট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাকিবুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। চার জনের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের ডীন, রেজিস্ট্রারসহ আরো দুইজন রয়েছেন।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান, ওই লাইটি ১১ হাজার ভেল্টেজের ছিল। সড়কের উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন ক্রস করা অবস্থায় রয়েছে। একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে দোতলা বাসটি একটু হেলে পড়ায় বিদ্যুতায়িত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা বছরের পর বছর যাবত দ্বিতল বাসেই বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পিকনিক করে থাকি। দুর্ঘটনা আসলে বলে কয়ে আসে না। দুর্ভ্যাগ্যবশত একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এটা কাউকে দোশ দেয়ার চাইতে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, কিভাবে আহত শিক্ষার্থীদেরকে চিকিৎসা করানো যায়, যেসব শিক্ষার্থীদেরকে সেভ আছেন তাদেরকে কিভাবে নিরাপদে পৌছানো যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তদন্ত করার পর বলা যাবে এটি দুর্ঘটনা কি’না।
শিক্ষার্থীরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ছিল কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, নেশাগ্রস্থ থাকার বা নেশা করার কোনো প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের শিক্ষকেরাও ছিলেন। সাংবাদিকেদর সাথে শিক্ষার্থীদের দুর্ব্যবহার করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দু:খ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এবং নিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলার পর বলতে পারব তাদের পক্ষ থেকে মামলা করবে কিনা।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) সালমা আক্তার, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন ছাত্রের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি।