বরগুনায় বিচারক ও ভবন সংকটে ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

মোঃ আসাদুজ্জামান, বরগুনাঃ

বরগুনার আদালতে বেড়েছে মামলার জট। এতে ন্যায় বিচার পেতে এসে উল্টো বিরম্বনায় পড়েছেন বিচার প্রার্থীরা। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভবন না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে খোদ বিচারক এবং আইনজীবীদেরও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারক সংকট, এজলাস সংকট ও ভবন সংকটের কারণে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বরগুনায় প্রায় ২৬ হাজার মামলা বিচারাধীন। জেলার ২১ জন বিচারকের পদের মধ্যে ৬টি পদই শূন্য। এছাড়াও সংকটের কারনে একই এজলাস  দুইজন বিচারক পালাক্রমে ব্যবহার করেন। এতে বাড়ছে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা।

আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি মানুষ আদালত সংশ্লিষ্ট কাজে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বসার জায়গা না থাকায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা খোলা মাঠ বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বারান্দায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ’ বিচারপ্রার্থী। তিল ধারণের ঠাঁই নেই এখানে। সদর উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের বারান্দায় দাঁড়ানোর জায়গা না থাকায় অনেকে তপ্ত রোদের মধ্যে অবস্থান নিয়েছেন আদালতের সামনের খোলা মাঠে। নারী বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে শিশুরা থাকার চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে স্থান সংকটের কারণে একটি এজলাসের মধ্যে দাপ্তরিক কাজকর্ম সারছেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। আর যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এর মধ্যে ভিড় ঠেলে কোন রকমে আদালত কক্ষে ঢুকছেন আইনজীবীরা।

দীর্ঘদিন ধরে বরগুনা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারক না থাকার কারণে হাজার হাজার মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে। বিচার প্রার্থীরা পাচ্ছে না তাদের বিচার।

এ বিষয়ে  কথা হয় আদালতে বিচার প্রার্থী বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা জামাল ইবনে মুসার সাথে,  “২০০৭ সালে জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি, এরপর পেরিয়ে গেছে ১৮ বছর! এখন পর্যন্ত এ মামলার কোন সুরাহা হয়নি। তাই দীর্ঘ বছর ধরে আদালতে ঘুরে ঘুরে হতাশ এই বিচারপ্রার্থী।”

আদালতের বারান্দায় কথা হয় কাজল রেখা নামের পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থেকে আসা এক বিচারপ্রার্থীর সাথে, তিনি বলেন, “২০১২ সালে বেতাগীতে তার মায়ের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করেছিলেন এখনো তার সুরাহা হয়নি। দীর্ঘ ১৩ বছর কেটে গেলেও বিচারক সংকটসহ নানা জটিলতার এখনো তিনি ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না বলে দাবি তার।”

বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন,বিচারক নেই জানিয়ে মামলার জট বাড়ছে “বরগুনাতে সকল আদালতে বিচারক নাই বিধায় মামলার জটিলতা বাড়ছে। যদি  বিচারকের শূন্যতা কেটে যায় তবে তবে বিচার ব্যবস্থাও ত্বরান্বিত হবে। আমরা আশা করব অতি দ্রুতই শূন্য পদে বিচারক প্রদানের মাধ্যমে বরগুনার মানুষের দুর্দশা কেটে যাবে। ”

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে বরগুনা নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, “বৃষ্টির দিনে আদালতে আসা মানুষজন বৃষ্টিতে ভিজে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার গরমের সময়ও একইভাবে এই মাঠেই আশ্রয় নিতে হয়। বর্তমান সরকারের কাছে একটাই দাবি যাতে করে এখানে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে করে বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হবে।”

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আকতার হোসেন বলেন, “এজলাস সংকট ও বিচারক পদ শূন্য থাকার ফলে প্রতিদিন মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মামলা জটও বাড়ছে, এছাড়া আমাদেরও দাপ্তরিক কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। নতুন একটি ভবন হলে আমাদের সকল সমস্যা সমাধান হবে।”

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. নুরুল আমিন  বলেন, “আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন আছে কিন্তু আমাদের সাবেক জন প্রতিনিধিরা বরগুনার জন্য কিছুই করতে পারেননি। শুধু একটি ভবন না থাকায় ভোগান্তিতে আছেন বিচারকরা ও আইনজীবীরা। সংকট নিরশনে ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি।  পাশাপাশি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।”

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement