হারুন-অর-রশিদ বাবু ; রংপুর
রংপুরের পীরগাছায় অর্থ আত্মসাৎ এর দায়ে সমবায় সমিতির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে থেকে সমিতির শেয়ার সঞ্চয়সহ যাবতীয় নথিপত্র উদ্ধারে কোর্টের আদেশের ১২ দিনেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ। অপরদিকে নথিপত্র উদ্ধারের অভিযোগ করে হামলার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী।
রোববার (২৫ মে) বেলা ১১ টায় উপজেলার পারুল ইউনিয়নের মনুরছড়া এলাকায় ভুক্তভোগী মাসুদ রানা নয়নকে দ্বিতীয় দিনের মতো হামলার উদ্দেশ্যে ধাওয়া দেয় প্রতিপক্ষ শফিকুল ও আবু সাঈদ গং। এর আগে ২৪ মে শনিবার সকাল ১০.৩০ টায় উপজেলার পারুল ইউনিয়নের মনুরছড়া গ্রামে প্রথম দফায় তিনি হামলার শিকার হন।
ভুক্তভোগী মাসুদ রানা নয়ন উপজেলার পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ আলাইকুমারি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সদস্য। অপরদিকে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদ একই সমিতির অর্থ আত্মসাৎ এর দায়ে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি। এঘটনার পর সার্চ ওয়ারেন্টের ১২ দিনেও পীরগাছা থানা পুলিশ বিলুপ্ত কমিটির কাছে থেকে নথিপত্র উদ্ধার না করায় এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই সমিতির সাধারণ সদস্যবৃন্দ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অর্থ আত্মসাৎ এর দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় চলতি বছরের গত ১১ মার্চ পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নে অবস্থিত নাগদাহ আলাইকুমারি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি: এর কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ জারি করে, পীরগাছা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মুকিত বিন লিয়াকত কে সভাপতি করে তিন সদস্য বিশিষ্ট অন্তবর্তী কমিটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে রংপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস সবুর। এই কমিটি ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত কমিটির হাতে দায়িত্ব অর্পণের কথা থাকলেও বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি সমিতির শেয়ার সঞ্চয়ের কাগজসহ যাবতীয় নথিপত্র কুক্ষিগত করে রাখে। অন্তর্বর্তী কমিটি নোটিশ করে ও সরাসরি বিলুপ্তপ্রায় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে যাবতীয় নথিপত্র ফেরত দেয়ার কথা বলে তারা নির্দেশ অমান্য করে। এরই প্রেক্ষিতে সমিতির সদস্য মাসুদ রানা বাদী হয়ে গত ৭ মে রংপুরের অতিরিক্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সমিতির সঞ্চয় রেজিস্ট্রার, শেয়ার রেজিস্ট্রার,ভর্তি রেজিস্ট্রার,অফিসের চাবি,অফিসের আসবাবপত্র,ঋণ প্রদানের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্ট্যাম্প, সমিতির দলিল, সমিতির ব্যাংক চেক বই উদ্ধারের আবেদন করলে গত ১০ মে এবিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৩ মে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী এসআই শফিক কে এবিষয়ে দায়িত্ব প্রদান করে। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিন দফায় সময় নিয়েও এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদিকে সার্চ ওয়ারেন্টের বিষয়ে জানাজানির পর হামলার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী মাসুদ রানা নয়ন জানান, গত ১৩ মে আদালতের সার্চ ওয়ারেন্ট থানায় জমা হলে এস আই শফিক কে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৪ তারিখে আবারো থানায় গিয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করি। আবারো ১৭ তারিখ গেলে ওনি ২২ তারিখ সময় দেয়। ২২ তারিখের সময়টি ওসি তদন্ত পরিবর্তন করে ২৫ তারিখ নতুন তারিখ নির্ধারণ করে দেন। পুনরায় পরের দিন ২৩ তারিখে আবার ওসির সঙ্গে দেখা করলে ওনিও বলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৫ তারিখে যাবে। এর মধ্যে এরা বুঝতে পারিয়া আমার উপর হামলা করলো ২ দফায়।আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার মামলার কোর্টের আদেশ হওয়ার ১২ দিনেও পুলিশ ব্যবস্থা নিলো নাহ। আমার উপর হামলার ঘটনায় আর কি ব্যবস্থা নিবে।
এদিকে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কোন মারপিটের সঙ্গে জড়িত নেই। গতকাল ওই ছেলেই আমার ফুফাতো ভাইয়ের উপর হামলা করেছে।আজকেও আপনি লোকজন নিয়ে ধাওয়া দিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি ফোন কেটে দেন।
পীরগাছা থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যস্ততার কারণে এখনো যেতে পারিনি। আজকে যাওয়ার কথা ছিলো। এখন কোর্টে আছি। একটু পর সার্কেল অফিস আর এসপি স্যারের অফিসে যাবো। আমি অনেক ব্যস্ত। ওরা যদি হামলা করে থাকে তাহলে থানায় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পীরগাছা থানার কর্মকর্তা ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ও এসএমএস করেও পাওয়া যায়নি।
রংপুর জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) আসিফা আফরোজ আদরী বলেন, এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।