মো.আলী মুবিনঃ
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২১ লক্ষ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনায় লুণ্ঠিত অর্থ, বিদেশি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও গাড়িসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। মোঃ জাফর (৩৩) ২। মোস্তাফিজুর রহমান (৪০) ৩। সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২) ৪। মোঃ সোহাগ হাসান (৩৪) ৫। মোঃ জলিল মোল্লা (৫২) ও ৬। পলাশ আহমেদ (২৬)।মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুন) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গত (২৭ মে ২০২৫) সকাল আনুমানিক ৯:৩০ ঘটিকায় মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী তাদের মিরপুর-১১ নম্বরের, সি-ব্লক বাসা হতে একটি কালো ব্যাগে ব্যবসার ২১ লক্ষ টাকা ও বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (মিরপুর ১০ নম্বর) উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা করেন। তারা সকাল আনুমানিক ৯:৪০ ঘটিকায় শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলির মাথায় পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে চারটি মোটরসাইকেলে ওঁৎ পেতে থাকা অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন মাস্ক পরিহিত ডাকাত তাদের পথরোধ করে। তাদের একজন জাহিদুল হক চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার হাতে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জাহিদুল হক এবং তার শ্যালক রাসেল ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে মুখোশধারী একজন ডাকাত পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি করে ভীতির সৃষ্টি করে এবং অপর একজন ডাকাত ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরের বাম পাশে আঘাত করে। চাপাতির আঘাতে জাহিদুল গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে উল্টো পথে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনাটি একজন পথচারী তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ডিবির একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেফতার, ব্যবহৃত অস্ত্র ও গাড়ী উদ্ধারের লক্ষ্যে মাঠে নামে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিম ঘটনায় ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাইক্রোবাসটির চালক জাফরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর মাইক্রোবাসটি উক্ত ডাকাতির কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করে। ডিবি টিম তার দেওয়া তথ্য মতে গাজীপুর টংগী এলাকা হতে উক্ত মাইক্রোবাসটি জব্দ করে।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, ডিবির একাধিক টিম একইসাথে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত ডাকাতদলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ অপর সদস্য মোস্তাফিজ, পলাশ, দিপু ও সোহাগকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে ডাকাতির লুন্ঠিত পাঁচ লক্ষ তিন হাজার টাকা ও ১০৬ টি বিভিন্ন মানের বৈদেশিক মুদ্রা, দুই লক্ষ ১২ হাজার টাকা মানের জাল টাকা এবং ঘটনার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই পেশাদার ডাকাত এবং তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, খুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে।