মোঃ সুমন তালুকদার, শরীয়তপুর
শরীয়তপুর শহরের প্রধান সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে সড়ক বিভাগ।
জানা গেছে, শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে থাকা শহরের প্রধান সড়কের জমিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে মোট ১৪৬টি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। এ কারণে সড়কটি সংকুচিত হয়ে যানজট ও দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নাগরিক দুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে।
সড়কের পাশে যাত্রী ছাউনি, ফুটপাত, ড্রেন, সৌন্দর্যবর্ধন এবং সড়কবাতি বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ফলে ফাঁকা জমিগুলোতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধভাবে ভবন, সীমানাপ্রাচীর ও প্রবেশপথ নির্মাণ করে দখলে নেয়।
বিভিন্ন সময় ভূমি জরিপের সুযোগে অনেকেই ওই জমিতে নিজেদের নামে নাম অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ফলে বিআরএস পর্চায় সওজের জমি ব্যক্তিগত মালিকানার নামে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে সওজ ২০১৭ সালে শরীয়তপুর জজ আদালতে ১৮টি মামলা করে, যা এখনও বিচারাধীন।
সড়ক বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে ৮৭ শতাংশই বর্তমানে দখলে রয়েছে। এসব জমিতে নির্মিত হয়েছে বহু পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা।
দখলদারদের মধ্যে শুধু ব্যক্তি নয়, জেলা পরিষদ, বিদ্যুৎ বিভাগ (ওজোপাডিকো), শরীয়তপুর পৌরসভা, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও আনসার-বিডিপি জেলা কার্যালয়ের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এ কারণে প্রশাসনিক জটিলতা আরও বেড়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের চাপ দেখা দেয়।
সওজ বিভাগ ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি ১৪৬ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। একাধিকবার নোটিশ দিয়েও দখলদাররা স্থান না ছাড়ায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আজ ধানুকা স্টেডিয়াম থেকে কোর্টের মোড় পর্যন্ত অন্তত ১৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
এক পথচারী মো. রবিন বলেন, “প্রভাবশালীরা যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ করায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হচ্ছে এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে। দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করার দাবি জানাই।”
বাসচালক সোহাগ বেপারী বলেন, “জেলা শহরের রাস্তা এতটাই ছোট যে গাড়ি চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। দ্রুত রাস্তা বড় করার ব্যবস্থা করা দরকার।”
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী কমিশনার) সালাউদ্দিন আইয়ুবী বলেন, “সড়ক বিভাগের জায়গা হওয়ায় জেলা প্রশাসন তাদের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। আজ ১৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যেসব স্থাপনার বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান, সেগুলোর বিষয়ে আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”