নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সমাজ ও রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম। জনমানুষের নিকট গঠনমূলক ও সত্য সংবাদ প্রকাশ করে সমাজের অনিয়ম, অপরাধ, দুর্নীতিকে প্রশাসন ও জনগণের নিকট তুলে ধরার মাধ্যমে জনসচেতনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ বলা হয়। কিন্তু মুদ্রার আরেকপিঠে সাংবাদিক পরিচয়ে মানুষের ভরসাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু সাংবাদিক চাঁদাবাজি, প্রতারণা, তদবির বানিজ্য ও হুমকির মাধ্যমে এক জনদূর্ভোগমূলক কার্যক্রমের সাম্রাজ্য তৈরি করেছে। এমনই এক চাঁদাবাজ সাংঘাতিক বজলুর রহমানের অপকর্ম ও অরাজকতার আমলনামা আমাদের কন্ঠের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে।

বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দেওয়া বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। অনিয়মের ধুয়া তুলে কোথাও ভবন নির্মাণ শুরু হলে চাঁদা দাবি, বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে চাঁদা দাবি, এমনকি সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে ওএমএসের পণ্য কিনে গুদামজাত করে বেশি দামে বিক্রির ঘটনাও রয়েছে। আমুলিয়ার একটি গুদাম থেকে এই চক্রের মজুত পণ্য উদ্ধারের ঘটনায় ডেমরা থানায় মামলাও হয়।
আওয়ামীলীগ সরকার থাকাকালীন সময়ে সাবেক মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এবং পলাতক ফ্যাসিস্ট ব্যারিস্টার শ ম রেজাউল করিম এর ছত্রছায়ায় এই বজলুর রহমান ও তার দোসরদের সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিল এক অপ্রতিরদ্ধ অরাজকতার সাম্রাজ্য। এছাড়াও এই চাঁদাবাজ সাংবাদিক বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে দৈনিক নতুন বাংলার খবর নামে এক অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর সম্পাদক ও প্রকাশক দাবি করেন, যাতে সরকারি গণমাধ্যমের নিয়ম অনুযায়ী বৈধতার অনেক ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছামতো পরিচয়পত্র বানিয়ে এই পরিচয়ে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষদের প্রতারণার শিকার করছেন তিনি। এইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তিনি এবং আরো কিছু সংখ্যাক অসাধু সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে রাজধানীজুড়ে একটি অপকর্মের চক্র গড়ে তুলেছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর ডেমরা এলাকার একজন ব্যবসায়ী ও বিএমডিসি ডি ক্যাটাগরির ডাক্তার আলমগীর হোসেন সিদ্দিকী এর শিফা গ্লোবাল টুরিজম লি. এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে এই চাঁদাবাজ সাংবাদিক বজলুর রহমানসহ তার সাথে ১৫/২০ জনদের নিয়ে তার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং তাদের চক্রের একজন মহিলা সদস্যকে চেকআপ করানোর কথা বললে উক্ত চিকিৎসক মহিলা রোগীকে মহিলা ডাক্তার ছাড়া দেখবেন না বলে জানিয়ে দেয় অতঃপর বজলুর রহমান সাংবাদিক পরিচয়ে আলমগীর হোসেন এর প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ও ডাক্তারী লাইসেন্স দেখানোর জন্য তাকে জোরাজোরি করতে থাকে।
কিন্তু আলমগীর হোসেন তার লাইসেন্স ম্যাজিস্ট্রেট অথবা কোর্টের আদেশ ছাড়া বজলুর রহমানকে দেখাতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এরপর বজলুর রহমান ও তার সাথে থাকা অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি তাকে মহিলা রোগীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ করবে বলে ব্ল্যাকমেইল করেন। এবং পরবর্তীতে তর্ক বিতর্ক চলাকালীন সময় বজলুর রহমানের সাথে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ল্যাবের রুমে প্রবেশ করে আলমগীর হোসেনের টেবিলের নিচে থাকা ব্যাগের ভিতরে তার নিজের নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের চেক বই, টেবিলের উপর থাকা আনুমানিক ২০,০০০/- টাকার বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সামগ্রী এবং তার ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল বিভিন্ন ডকুমেন্ট চুরি করে নিয়ে নেয়।
এক পর্যায়ে বজলুর রহমান উক্ত চিকিৎসকের কাছে ৫০,০০০/- টাকা চাঁদা দাবি করে এবং তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার চায় যেনো ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন। কিন্তু আলমগীর হোসেন চাঁদা প্রদানে রাজি নাহলে অতঃপর বজলুর রহমান ও তার সাথে থাকা অজ্ঞাতব্যক্তিরা তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে চলে যান।
উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন সিদ্দিকী ডেমরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এবং একজন চিকিৎসকের উপর এমন অনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ডেমরা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বজলুর রহমান একজন নামকরা চাঁদাবাজ তার ব্যাপারে ডেমরা এলাকায় অসংখ্য অভিযোগ আছে এর আগেও তিনি বিভিন্ন মামলায় আটক হয়েছিলেন, ডঃ আলমগীর হোসেন একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে আইনগতভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ধারা- ১৪৩/৪৪৮/৩৮৫/৩৮০/৫০৬ পেনাল কোডে মামলা হয়েছে, উক্ত মামলা নং- ০১। আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অনেক প্রমাণাদি হাতে আছে।