তৌকির আহাম্মেদ, সাভারঃ
সাভারে মেয়ের ছুরিকাঘাতে বাবা আব্দুস সাত্তার (৫৬) নিহত হয়েছেন। বাবাকে হত্যা করে নিজেই ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে জানান ২৩ বছর বয়সী তরুণী জান্নাত জাহান শিফা।বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভোর ৪টার দিকে সাভার পৌরসভার মজিদপুর কাঠালবাগান এলাকায় আব্দুল কাদেরের মালিকানাধীন ভবনের ৫ম তলায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
নিহতের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। তিনি স্ত্রী মারা যাওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে ওই এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং কম্পিউটারের দোকানে চাকরি করতেন।
পুলিশ জানায়, ভোর ৪টার দিকে নিহত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোনকল করে তাঁর বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং নিজেকে আটক করতে অনুরোধ করেন। পরে ২৩ বছর বয়সী ওই তরুণীকে আটকসহ তাঁর বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত তরুণীর অভিযোগ, মা মারা যাওয়ার পর তিনি তাঁর বাবার হাতে ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় আব্দুস সাত্তার গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস পর জামিনে বের হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্ষোভে তাঁর বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তরুণী বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল বুধবার রাতে তিনি তাঁর বাবাকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাওয়ান। এরপর ভোর ৪টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ৯৯৯-এ খবর দেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ওই তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা পরপর তিনটি বিয়ে করেছিলেন। আমার মা তাঁর তৃতীয় স্ত্রী। আমাকে অনেক ছোট রেখেই মা মারা যান। এরপর থেকে বাবার কাছেই আমি বড় হয়েছি। মা না থাকায় একসময় আমি বাবার লালসার শিকার হই। ২০২২ সালে আমি বাবার বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তিনি জামিনে বের হন। এরপর বাবা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং আমার সঙ্গে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমিও তাঁকে ক্ষমা করে দেই।
তরুণী আরও বলেন, আমাকে নিয়ে বাবা একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন মাস ছয়েক আগে। ওই বাসায় আমি আর আমার বাবা দুজনেই থাকতাম। কিন্তু তিনি পুনরায় আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এতে আমার ভেতরে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভ আর কষ্ট থেকে আমি বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল (বুধবার) দিবাগত রাতে ভাতের সঙ্গে তাঁকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়াই। এরপর ভোর ৪টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে হত্যা করে পুলিশে খবর দিই।
এ ব্যপারে সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন বলেন, মেয়েটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁকে আটক করা হয় এবং তাঁর বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। মৃতদেহের বুকে ও পেটে বেশ কিছু ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।