সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আজ শনিবার শেষ হচ্ছে কয়েকশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা গাছের মেলা । উপজেলার বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামে গত মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী এ মেলা শুরু হয়। কয়েক শত বছরের পুরনো গাছের একটি খুঁটিকে কেন্দ্র করে ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা উদযাপন করে থাকেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছর ৩১ বৈশাখ বিশেষ পূজা অর্চণার মধ্য দিয়ে এ মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এলাকাবাসী জানান, কয়েকশত বছর আগে হামছাদী গ্রামের ফনি সেন ও সুরেন্দ্র সেন নামের দু’ভাই ঘর তৈরির জন্য বার্মা থেকে ২০টি খুঁটি কিনে আনেন। বাংলা মাসের ১ জ্যৈষ্ঠ রাতে তারা দুভাই স্বপ্নে দেখেন তাদের কেনা খুঁটি থেকে ২টি খুঁটি নিজেদেরকে দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। খুঁটি দুটি পাগল রূপ ধারণ করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছে আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা করো। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে।
এ ঘটনার পর পরের দিন দু’ভাই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পাড়ে খুঁটি দুটি দেখতে পায়। তারপর থেকে তারা দুই ভাই খুটিগুলোকে দেবতা মনে করে পূজা অর্চনা করতে থাকে। সেই থেকে ওই এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন গাছের খুঁটি দুটিকে প্রতিবছর পহেলা জ্যৈষ্ঠে বিশেষ পূজা অর্চনা করে আসছে। পরে দুটি খুঁটি থেকে একটি হারিয়ে যায়।
এলাকাবাসী আরও জানান, যে খুটিটির পূজা করা হয় সে খুটিটি একটি পুকুরে সারা বছর ডুবিয়ে রাখা হয়। পাগল ভক্তরা ভক্তি করার জন্য প্রতিবছর পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করায়। সিঁদুর মাখে তাছাড়া ফল ফলাদি ঘি, খাসি ও পাঠাবলি দিয়ে পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করে। পূজা শেষে খুঁটিটি আবার ওই পুকুরের পানিয়ে ডুবিয়ে রাখা হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন পান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগম ঘটে। অনেকেই তাতের মন বাসনা পূরণের জন্য এখানে বিভিন্ন ধরনের মানত দিয়ে থাকেন।
পাগলা গাছের মেলায় নাগর দোলা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন মনোহারি জিিিনসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা।
পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য তপন কুমার চক্রবর্তী জানান, এ মেলা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। এটি শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। এ মেলায় গীতা পাঠ, কীর্তনসহ সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সংগীত পরিবেশন করা হয়।