স্টাফ রিপোর্টার :
বনানী সুপার মার্কেটে ব্যবসায়ীর দোকান ক্রয় ও বরাদ্দের নামে অভিনব জালিয়াতি ও প্রতারণার সন্ধান পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
বনানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মোঃ তপন শেখ, মালিক- আরাফাত ক্রোকারিজ এর কাছে দোকান বরাদ্দ , দোকান ক্রয় বাবদ ও ঋণ হিসেবে টাকা গ্রহণ করে দোকান দেওয়ার কথা বলে বনানী সুপার মার্কেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক – মোঃ রোমান সরদারকে প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড এর বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ১,৫০,৬০,০০০/=(এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ ষাট হাজার) টাকা প্রদান করে। টাকা গ্রহণ করার পরেও রোমান সরদার বিভিন্ন তালবাহানা এবং দোকান ক্রয় করে দেওয়ার নাম করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ব্যবসায়ী মোঃ তপন বুঝতে পারে যে, তার সাথে দোকান ক্রয়ের কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, রোমান সরদার মার্কেট এর নীচ তলায় ২০ নং দোকান ক্রয়ের কথা বলে একপ্রকার অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী টাকা ফেরত চেয়ে একাধিকবার আইনী লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০ নম্বর দোকান খরিদ করিয়া না দেওয়ায় এবং ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় একপর্যায়ে রোমান সরদার বিভিন্ন সময়ে মো: তপনকে ছয়টি চেক প্রদান করে। যাহার টাকার পরিমাণ মোট ৮১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। উক্ত চেকগুলি ডিজঅনার হলে ব্যবসায়ী মো: তপন সি.এম.এম আদালতে সি.আর .মোকদ্দমা নং-২১৩২ /২৪,২১৩৩/২৪, ২১৩৪/২৪ এবং ২৮৪৮/২৪ দায়ের করে।একপর্যায়ে চেকের মাধ্যমে আংশিক টাকা ফেরত দিলেও এখনোসর্বমোট১,২৯,৬০,০০০( ৪৭,৯০,০০০+ ৮১,৭০,০০০) এক কোটি উনত্রিশ লক্ষ ষাট হাজার টাকা এখনো পাওনা রয়েছে।
বর্তমানে আদালত থেকে রোমান সরদার জামিন প্রাপ্ত হয়ে এসে ব্যবসায়ী মো: তপনকে মার্কেটের ভিতর নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নানা ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, মামলা-মোকদ্দমায় ফেলে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে চলেছে। ওই সময় যারা দোকানের সাক্ষী হিসেবে ছিল তোফাজ্জল হোসেন আকন,মোহাম্মদ আলমগীর,মোঃ সুমন আহমেদকেও নানা প্রকার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোমান সরদার এর বিরুদ্ধে লুটপাট, প্রতারনা,অন্যের স্বাক্ষর নকলের জন্য একাধিক মামলা রয়েছে।
আরেকটি মামলা-সি. আর. মামলা নং-১২৬৯/২৪ ধারা-৪০৬/৪২০/৫০৬ পেনাল কোড। মার্কেটে রোমান সরদার নিজ মালিকানাধীন ৭০ বর্গফুট বিশিষ্ট দোকান নম্বর ২০ এর সম্পূর্ণ দোকান ঘরটির আয়তন ১৩৯ বর্গফুট, যা মাসিক ভাড়া ৪৫,০০০/= হাজার টাকা এবং অগ্রিম জামানত ১০,০০,০০০/= দশ লক্ষ টাকা ধার্য হয় এবং চুক্তি সম্পাদন হয়। সে মোতাবেক তপন শেখ মিলন অগ্রিম টাকা প্রদান করে কিন্তু তার দোকান আংশিক অর্ধেক বুঝিয়ে দিয়ে বাকি অর্ধেক এখনো বুঝিয়ে দেয় নাই। সে মোতাবেক অগ্রিমের বাকী অর্ধেক পাঁচ লক্ষ টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে মাসিক ভাড়া ২২,৫০০\= টাকা অতিরিক্ত নেওয়ায় বাদী বিবাদীর নিকট মে/২৪ তারিখ পর্যন্ত মাসিক ভাড়া ৪,৫০,০০০/=( চার লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকাসহ ৯,৫০,০০০ (নয় লাখ পঞ্চাশ) টাকা বিবাদীর নিকট পাওনা রয়েছেন। এদিকে বিবাদী ২৪/৫/২০২৪ তারিখের নোটিশ প্রদান করে ৩০/৬/২০২৪ তারিখের মধ্যে দোকান ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য। অথচ ভাড়াটিয়ার চুক্তির মেয়াদ ৩০/১২/২০২৫ তারিখ পর্যন্ত বলবত রয়েছে। ২০ নং দোকানের বিপরীতেও অনুরূপ অগ্রিম টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রোমান সরদার দোকানটি তালাবদ্ধ করে রাখে। সেখানে ৪০/৫০ লক্ষ টাকার মালামাল আটকে রাখা হয়েছিল।
এদিকে মামলার আইও সাব ইন্সপেক্টর মোঃ ওয়াহিদুল হাসান তার লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে,দোকান ঘরটির চুক্তির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তপন শেখকে পেশীশক্তি প্রয়োগ করে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করেন।
সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রোমান সরদার দোকানটির সম্পূর্ণ মালামাল মাত্র তিন দিনের নোটিশে খালি করে সমিতির অফিসে স্তুপউপকারে রেখে দোকানটি খালি করে নিজ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়মবহির্ভূত। পাওনা ১৬,৬০,০০০/= টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে মো: রোমান সরদার (৪২) এর বিরুদ্ধে বাদীর আনিত অভিযোগটি সত্য। অর্থাৎ পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমানিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোমান সরদার একাধিক মামলার আসামি সি.আর. মামলা ৭৪১/২৪,সি. আর. মামলা-৪১৫/২৪, সি.আর. মামলা-১৪০৪/২৪,( লুটপাট ও প্রতারনা ও স্বাক্ষর জালিয়াতি) মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট , আদালত নং-৩,ঢাকা সি.আর. মামলা নং-১৫২৫/২০২৪( বনানী) ধারা- ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ পেনাল কোড। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: কামাল হোসেন, বনানী থানা রোমান সরদারের বিরুদ্ধে জালজালিযাতির তথ্য প্রমান পেয়ে সিআইডিতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
কে এই রোমান সরদার : নাম- রোমান সরদার, ( বনানী সুপার মার্কেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) পিতা-মো: জবির উদ্দিন সরদার, মাতা- আনোয়ারা বোগম,স্থায়ী ঠিকানা-গ্রাম, রোয়ার সরদারপাড়া,থানা-আক্কেলপুর,জেলা-জয়পুরহাট। বর্তমানে- বারিধারা এলাকায় বসবাস।
অন্যদিকে ফারজানা হোসেন এর মালিকানাধীন বনানী সুপার মার্কেট দ্বিতীয় তলায় ২০০ বর্গফুটের ৩ নং দোকানটি রোমান সরদার ভাড়া নিয়ে ১১ মাস ভাড়া পরিশোধ না করে এবং বেশ কয় বছর ডিড বা চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তা নবায়ন না করে দোকানটি জবর দখল করে রেখেছে। এ বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার,গুলশান বিভাগ, ঢাকাকে মালিক লিখিত আকারে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, এতদিন আওয়ামীলীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নাম ব্যবহার করে মার্কেটে আওয়ামীগার সেজে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন, ঢাকা ১৭ আসন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ. আরাফাত এর নির্বাচনী প্রচারণা, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ছবি সামনে-পিছনে রেখে ব্যবসায়ীদেরকে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখালেও এখন নব্য বিএনপি সেজেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দোসর রোমান সরদার ইতিপূর্বে স্বেচ্ছায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও পদত্যাগ করেছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এতগুলো মামলা কাধে থাকায় রোমান সরদার যে কোন সময় দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন।