বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা শাহরিয়ার আছেন বহাল তবিয়তে

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

রবিউল ইসলাম :

যেসকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জনগণ দুর্নীতিবাজ ও ভুয়া সনদে চাকুরী নিয়েছেন বলে ধারণা করেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সরকারী দপ্তরগুলোতে সরকারী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অপরাধ ও  দূনীতির অভিযোগ সামনে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ উঠেছে বাবা মোঃ লুৎফর রহমানের নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি পেয়ে আঙ্গুল পুলে কলা গাছ বনে গেছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোঃ শাহরিয়ার রাসেল।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে হাইকোর্ট এক রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন—রিট আবেদনকারীর আবেদন নিষ্পত্তি না করে এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২-এর বিধান অনুযায়ী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোঃ শাহরিয়ার রাসেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং কেন তা আইনগতভাবে অকার্যকর ঘোষণা করা হবে না—এই মর্মে।

বিবাদীদেরকে চার (০৪) সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ৩ ও ৪ নম্বর বিবাদীদেরকে আদেশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে আবেদনকারীর গত ২রা ফেব্রুয়ারি ২৫  তারিখের আবেদন (সংযুক্তি-এইচ) আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২০ এপ্রিল বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেন আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ-উল-ইসলাম।

আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, মোঃ শাহরিয়ার রাসেল গত ১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে যোগদান করেন। নিয়োগের জন্য আবেদন করার সময় তিনি ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ এবং ‘বিভাগীয় প্রার্থী’ হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেন, যদিও তিনি প্রকৃতপক্ষে বিভাগীয় প্রার্থী ছিলেন না (সংযুক্তি-০১)।

পরবর্তীতে, তার পিতা মোঃ লুৎফর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ২৪ মার্চ ২০২২ তারিখে বাতিল করা হলেও শাহরিয়ার রাসেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করেননি (সংযুক্তি-০২)।

অনুসন্ধানে জানা যায়,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২-এর ৩৬ অনুচ্ছেদের ২ ও ৩ উপধারার বিধান অনুযায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বছরে একবার চাকরিবই পরিদর্শনের সুযোগ আছে এবং ত্রুটি বা অসঙ্গতি দেখা দিলে ১৫ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু মোঃ শাহরিয়ার রাসেল এ নিয়ম পালন করেননি।

উক্ত তথ্য গোপন করা দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর চ্যাপ্টার XVIII এর ধারা ৪৬৫ থেকে ৪৭১ অনুযায়ী প্রতারণামূলক অপরাধ, যা ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, শাহরিয়ার গত ১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে তার নামে ‘লজিক অ্যান্ড পিক্সেল টেকনোলজিস’ নামীয় একটি আইটি ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন (সংযুক্তি-০৪)। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ট্রেড লাইসেন্সের তথ্য তিনি চাকরিতে যোগদানের সময় গোপন করেন এবং পরবর্তীতেও তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।

এই তথ্য গোপন করাও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২-এর ৩৮ অনুচ্ছেদের ২(৪) ধারার পরিপন্থী।

এই বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ধরনের অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে মোখিক ভাবে এসেছে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করেন আমরা তার ব্যবস্থা নিবো।কারন শাহরিয়ার বাবা লূৎফর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বা ভুয়া সনদে চাকুরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া অভিযোগ উঠলেই তাকে বদলি করা, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মতো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতির জন্য কার্যকর জবাবদিহিতা ও প্রতিরোধের সম্ভাবনার মানদণ্ডে যা একেবারেই যথেষ্ট নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে ভুয়া সনদের মাধ্যমে চাকুরীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত শাহরিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্যি নয়। আমি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী পাইনি। আমি মেধার ভিত্তিতে চাকরী পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে সকল প্রমাণপত্র আমার ব্যাংককে দিয়েছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই করে আদালতকে জবাব দিবেন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement