আতঙ্কের মধ্যেও সেবা দিচ্ছে এনআইও হাসপাতাল

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

সিনথিয়া আক্তার:

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবায় ফিরেছে ঢাকার আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। অচলাবস্থাকালীন বঞ্চিত সেবা প্রত্যাশীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অধিনস্থদের বাড়তি দায়িত্ব পালনের নির্দেশও দিয়েছেন প্রতিষ্টানটির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ জুন থেকে অপারেশন থিয়েটার (ওটি), বহি:বিভাগ চালুসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে স্বাস্থ্য সেবা পুরোপুরি চালু হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্সসহ সকলের মধ্যেই ভর করছে অজানা আতঙ্ক। এই বুঝি ফের হামলা হয় তাদের ওপর। আতঙ্কে কর্মচারিদের অনেকেই একা হাসপাতাল ত্যাগ করেন না। প্রতিষ্টানটির চিকিৎসক, নার্স—স্টাফদের ওপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহতদের হামলার পর থেকেই এমন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তারা। যে কারনে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মকর্তা—কর্মচারিদের কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছিলো জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (এনআইও) হাসপাতাল। তবে কর্মবিরতি ভেঙ্গে আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকেই এখন তারা নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে চলেছেন।

গত শনিবার (২১ জুন) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (এনআইও) হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সামনের দু’টি প্রধান গেটে নিরাপত্তায় রয়েছেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য। ভেতরেও যথারীতি রয়েছে আনসার সদস্য পূর্ব পাশের সিঙ্গেল গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগী, তাদের স্বজন, কর্মচারিসহ সকল স্টাফদের। শধুমাত্র উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার গাড়ি ভেতরে প্রবেশ কিংবা বাহির হওয়া ছাড়া মূল গেইট খোলা হচ্ছেনা। জরুরী বিভাগ ও বহি:বিভাগে ছিলো রোগীদের চাপ। ওয়ার্ডগুলোতেও ছিলো ভর্তি থাকা রোগী।

হাসপাতালটির চতুর্থ তলার স্পেশালাজাইড কেয়ার ইউনিটের ১৪, ১৯ এবং ২৯ নম্বর সিটে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন জুলাই আন্দোলনে ৩ জন আহত রোগী। জুলাই গণআন্দোলনে চোখ আক্রান্তদের জন্য বরাদ্ধ ছিলো বিশেষায়িত এ ওয়ার্ড। গত ২৮ মে যখন হামলা চালানো হয় তখনো বিশেষায়িত এ ওয়ার্ডে গণ আন্দোলনে আহতদের মধ্যে ৫৪ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। একদিকে তারা হাসপাতালের ভেতর থেকে অপরদিকে তাদের ইশারায় হাসপাতালের বাইরে থেকে হামলা চালায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নামধারীদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। তাদের হামলায় আহত হন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্তত: ৪০ জন। ভাংচুর করা হয় বিভিন্ন কক্ষ। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় হাসপাতালের পরিচালককেও।

গণ আন্দোলনের হামলায় আহতদের মধ্যে গত শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালের বিশেষায়িত ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকা তিন জনকেও খুব শিগগিরই রিলিজ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগন। তারাও সুস্থ এবং তাদের শুধু রুটিন চিকিৎসা নিলেই হবে। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। অপরদিকে হামলাকালীন হাসপাতালে থাকা ৫৪ জনকে ইতিমধ্যে এনআইওএইচ থেকে তাদের বাড়ির স্ব স্ব ঠিকানায় চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তাদের আর এখানে চিকিৎসা নিতে আসার দরকার নেই। প্রয়োজনে নিকটবর্তী হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। তারা যাতে এনআইওএইচ—এ প্রবেশ করতে না পারে এজন্য কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট অধিনস্তসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও তালিকা দেয়া হয়েছে।

এদিকে এনআইও হাসপাতাল সূত্র বলছে, জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ইনডোর—আউটডোর মিলিয়ে গত ১০ মাসে মোট ১০৭৪ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভর্তি রাখতে হয়েছে ৭৬৯ জনকে। এদের মধ্যে আবার রেটিনার অপারেশন ৩৩৭টি, জরুরী অপারেশন ৫০৪ এবং কর্নিয়া পরিবর্তনের কাজ করতে হয়েছে দুই জনের।

হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জুলাই সংক্রান্ত ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে এখানে যারা ভর্তি ছিলেন অথবা এখনো রয়েছেন তাদের জন্য ছিলো বিশেষ বিশেষ সুবিধা। সুচিকিৎসার পাশপাশি তাদের খাবারের জন্য বরাদ্ধ ছিলো সাধারণ রোগীর থেকে ৭৫ টাকার বেশি খাবার। এছাড়া তাদের ওপর সকলেরই দূর্বলতা ছিলো। কিন্তু এই দূর্বলতাকে পূঁজি করে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন আর এদের কেউ বেডে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর্যায়ে অসুস্থ নয়। অথচ তারা চাচ্ছিলেন হাসপাতালকে বাসা বাড়ি বানাতে। কিছুটা আবাসিক হোটেলের ন্যায়। এরা ইচ্ছে হলেই বাইরে যেত। আমার ফিরে আসতো। অনেকে বেড়াতে যাবে এমন কথা বলেও লিখিতভাবে ছুটির আবদার করতো। তারা মূলত হাসপাতাল যাতে ত্যাগ করতে না হয় এজন্য যা করার তাই করতো। অনেকের নাকি যাবার কোথাও জায়গা নেই। হামলায় জড়িতদের মধ্যে একজনও ছাত্র ছিলেন না। অথচ এরা ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডেকে এনে গোল মিটিং করতো।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হামলার ঘটনার জন্য, জুলাই আন্দোলনের আহত কিছু তরুণকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ব নির্ধারিত মিটিং চলাকালীন ভাঙচুর ও কর্মচারীদের উপর হামলা চালায় গত ২৮ মে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেন। যে কারনে অনাকাঙ্খিত পরিবেশে সৃষ্টি হয়।

জুলাই আন্দোলনে গত শনিবার পর্যন্ত যে তিনজন হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন এদের মধ্যে একজনকে তার সিটে পাওয়া যায়নি। অপর দু’জনের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা এখানের চিকিৎসদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, তুলনামূলক কম অসুস্থদের বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও তাদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এখানে চিকিৎসকরা সুবিধা নিয়ে অথবা যারা যারা চিকিৎসকদের সাথে ঘন ঘন মিটিং করতে পারছেন তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের মতো তাদের দিকে সুনজর রাখা হচ্ছেনা। এক কথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যারা দালালি করতে পেরেছেন তারাই সুবিধা পেয়েছেন। চিকিৎসা বাদ দিয়ে স্টাফদের মানববন্ধন করার প্রতিবাদে আমাদের ওপর হামলা হয়।

গত শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে কথা হয় এনআইওর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলমের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি আমাদেরকন্ঠ কে বলেন, গত ২৮ মে জুলাই যোদ্ধা নামে আহতরা যে হামলা চালিয়েছে তা নজীরবিহীন। তারা পাশের পঙ্গু হাসপাতাল থেকে আহতদের এবং কতিপয় সম্বয়কদের মাধ্যমে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হাসপাতালে হামলা চালায়। এতে আমাদের ৭জন চিকিৎসকসহ মোট ৩৮ জন কর্মকর্তা—কর্মচারি আহত হয়েছেন। একজন চিকিৎসকের ওপর নির্দয়ভাবে হামলা করা হয়েছে। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিলো। ১৭ জন কর্মচারি, ৭ জন নার্স এবং ৮ জন আউটসোসিং কর্মচারি এখনো সুস্থ হতে পারেননি। আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন নিরাপত্তা। বর্তমানে ৩ শিফটে ৪২ জন আনসার ও পুলিশ প্রহরা রয়েছে। কিন্তু তারা কতদিনই বা নিরাপত্তা দিবে। বেশিরভাগ কর্মকর্তা—কর্মচারি হাসপাতালে আসা—যাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে থাকেন। ওরা কখনো সন্ধ্যা আবার কখনো মধ্য রাতে হাসপাতালে প্রবেশের চেষ্টা করে। শুক্রবার রাতেও তাদের দেখা গেছে। পুলিশ তাদের ঢুকতে দেয়নি। এত আতঙ্কের মধ্যেই আমরা সবগুলো বিভাগের পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেছি। আগে ওটি চলতো বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এখন সময় বাড়িয়ে ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এতদিন রোগীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, আহত চিকিৎসক—নার্সও স্টাফদের মধ্যে এখনো কেউ থানায় মামলা করেননি। তবে অনেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে। যদিও এখনো রিপোর্ট আসেনি। জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আহতরা পূনর্বাসনের দাবি করেছেন। কিন্তু এটাতো মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জুলাই ফাউন্ডেশন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত উদ্যেগের বিষয়, রাষ্ট্রীয় সীদ্বান্ত। তারা না বুঝেই হামলা চালায় হাসপাতালে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন সাধারণ স্বাস্থ্য সেবাপ্রত্যাশীরা।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement