বগুড়ার বালু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে রক্ষকই যেন ভক্ষক

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, বগুড়াঃ

বগুড়ায় নদীর গতিপথ ঠিক রাখা ও নদীর চ্যানেল তৈরির উদ্দেশ্যে বালু মহাল ইজারার সম্পূর্ণ পদ্ধতিই তৈরি হয় জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজেদের ইচ্ছেমতো এখানে কোন নিয়ম নিতির তোয়াক্কা করা হয়না। বরং প্রতিবছরই একটি মহলকে বালু উত্তোলনের লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ্যতার সুযোগ করে দেয়া হয়। এই সুযোগে টেন্ডারে উল্লেখিত নির্দিষ্ট স্থান থেকে বালু উত্তোলন না করে, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় চরম হুমকিতে পরেছে সারিয়াকান্দির যমুনা তীরবর্তী এলাকার মানুষগুলো। অন্যদিকে বৈধতার লাইসেন্স পুজি করে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরছেন মহলটি।

উল্লেখিত বিষয়ে, বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকটি প্রতিবেদন লক্ষ্য করলেই দেখা মেলে, অনিয়মের এই মস্তবড় ফিরিস্তি। এর মধ্যে ২০২৪ সালে বালু মহাল ইজারার লক্ষ্যে তৈরিকৃত প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নদী তীর থেকে ২.৭৫০ কিঃ মিটার দুরত্বে অবস্থিত বোহালী মৌজার চরটিতে  বিট/ভিটি বালু রয়েছে। নদীর গতি পথ ঠিক রেখে ৬০০ মিটারের একটি চ্যানেল তৈরি করে, নৌ চলাচল সচল রাখতে চরটি অপসারন করা প্রয়োজন। তাহলে যমুনা নদীর পানি অধিক  প্রবাহিত করে নদীর একপাশে ভাঙ্গন রোধ করা যেতে পাড়ে। কিন্তু বোহালী মৌজার এই চর থেকে কখনোই এক সিএফটি বালুও উত্তোলন করা হয়নি। অতএব চরটিতে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৭৯ হাজার ১৪০.৯ ঘটফুট বালু .০৪৮ টকা/ঘনফুট দরে, ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৫ হাজার ২০০ টাকা উল্লেখ করা ছিল।

একই কায়দায় অর্থাৎ ২০২৪ সালের ওই প্রতিবেদনটির শুধুমাত্র স্বারক নং, বালুর পরিমান, ইজারা মূল্য, বালুর এফএম ও কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর তারিখ পরিবর্তণ করে ২০২৫ সালেও অবিকল প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে এই প্রতিবেদনে বালুর পরিমান দেখানো হয় (২ কোটি ৯৩ লক্ষ এবং ০.৫২ টাকা ঘটফুট দরে ১ কোটি ৫২ লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসনের মনমতো না হওয়ায় ৯/০৩/২৫ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি চিঠি ইস্যু করে।

সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, পূণরায় বালুর পরিমান ও মূল্যহার পূণঃ যাচাই করে ১৬/০৩/২৫ তারিখের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য। সেই অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০/০৩/২৫ তারিখে পূণরায় অন্য একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এটাতে সবকিছু ঠিক থাকলেও শুধু বালুর পরিমান কমিয়ে অর্থাৎ দুই কোটি ৯৩ লক্ষের স্থানে মাত্র ৯৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৮২১ সিএফটি বালু উল্লেখ করা হয়। তবে বালুর পরিমান কমলেও কর্মকর্তাদের কৌশলগত কারনে টাকা এবং বালুর এফ এম বেড়ে যায়। পূর্বের প্রতিবেদনে বালুর এফ এম ০.৩০ থেকে ০.৫০ এর পরের প্রতিবেদনে ১.৫০ থেকে ২.০০ এফ এম এ পরিনত করা হয় এবং প্রতি ঘনফিট ০.৫২ টাকার  ১.২০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু চমুনার ফসলী চরে কখনো কোনভাবেই মোটা বালু পাবার কোন সম্ভাবনাই নেই, যা তাদের প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই প্রতিবেদনে বিট/ভিটি বালুর কথা উল্লেখ রয়েছে কিন্তু একই প্রতিবেদনে দুই ধরনের বালু দেখানো হয়েছে যা হাস্যকর। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে ইতিমধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি  হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে বগুড়া প্রেস ক্লাবে চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের কৃষি জমি রক্ষার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিধি মোতাবেক কোন বালু মহাল ঘোষনার পূর্বে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে জায়গা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা কিন্তু  পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বিগত সময়ে এবং বর্তমানে কখনোই হাইড্রোগাফিক জরিপ করেনি। বরং বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুর হক বগুড়ায় দির্ঘদীন কর্মরত থাকায় নিজের কৌশল ও দাম্ভিকতা কাজে লাগিয়ে নিজের মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করে থাকেন। আবার জেলা প্রশাসন এসব প্রতিবেদন সাদরে গ্রহণ করে তাদের টেন্ডার কার্যক্রমের কাজ অব্যহত রেখেছেন।

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হক এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করার মতো ইনষ্ট্রুমেন্ট আমাদের নেই। এছাড়া এই জরিপে যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন তা জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের দেয়া হয়না। যার কারনে নদীর মাঝে গিয়ে গুগোল ম্যাপ দেখে আমরা এই প্রতিবেদন তৈরি করে থাকি।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি এম ইমরুল কায়েস এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়, যা অতি সহজে করা যায়না। আর এই জরিপ প্রতিবছর করার প্রয়োজন হয়না। বিগত সময়ে একবার করা হয়েছিল সে অনুযায়ীই প্রতিবছর প্রতিবেদন দিয়ে থাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ফসলী জমিতে মোটা বালু কিভাবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরা বলতে পারবোনা। তবে এমন টেন্ডারের সিডিউল কেনার জন্যতো অনেকেই মরিয়া। এই এই কর্মকর্তা আরো বলেন আমাদের দায়িত্ব টেন্ডার দেয়া এবং নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করছে কিনা তা তদারিক করা।

নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করে যত্র তত্র থেকে বালু উত্তোলন করে নদী তীরবর্তী মানুষগুলোকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত সময়ে কি হয়েছে তা বলবোনা তবে এবার কঠিন নজরদারিতে রাখা হবে এবং টেন্ডারে উল্লেখিত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় অসংখ্যা কৃষক, সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসনের সহযোগিতায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতিবছর নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছেই। গত ২৩ সালে এক রাতে প্রায় দেরশতাধিক বাড়ি নদী গর্বে বিলিন হয়ে যায় এবং প্রতিবছর নদী ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। তাই যত্র তত্র থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং এবারের এই অপরিকল্পিত টেন্ডার বন্ধ করে পূণরায় যাচাই বাছাই অন্তে পরিকল্পিত টেন্ডার দিয়ে, ফসলী জমি ও নদী ভাঙ্গন রোধ করা এবং অসহায় মানুষদের পাশে দাড়ানো জোর দাবি জানায় তারা।

 

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement