মুজিবুর হত্যা মামলায় ৪ আসামি জেলখানায়, নির্দেশদাতা জাহাঙ্গীর অধরায়

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

খোকন মজুমদার,চট্রগ্রামঃ

কক্সবাজারে পূর্ব বিরোধের জেরে মুজিবুর রহমান (৩৭) নামে এক টমটম চালককে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনার একমাস অতিবাহিত হলেও হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫নাম্বার আসামি নির্দেশদাতা জাহাঙ্গীর আলম ধরাছোঁয়ার বাহিরে।বরং আইনশঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্নগোপনে থেকে নিহত মুজিবুরের পিতা শাহ আলম এবং ছোট ভাই তানভীরকে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হত্যার হুমকির বিষয়টি মামলার তদন্ত অফিসার সুস্ময় দাশ গুপ্তকে অবহিত করা হলেও অজ্ঞাত কারণে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন নিহত মুজিবুরের পরিবার।

নিহত মুজিবের পরিবার থেকে জানানো হয়, মামলার আসামী জাহাঙ্গীর এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
আসামি জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় সে অপরাধ করেও বারবার পার পেয়ে যায়।
নিহত মুজিবের মা জানান, জাহাঙ্গীর মুজিবকে হত্যা করে ক্ষ্যান্ত হয়নি। সে আত্নগোপনে থেকে তার পিতা শাহ আলমসহ আমার ছোট ছেলে তানভীরকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।হত্যার হুমকির বিষয়ে মামলার তদন্ত অফিসার সুস্ময় দাশ গুপ্তকে জানানোর পরেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক সুস্ময় দাশ গুপ্ত আমাদের কন্ঠকে বলেন, মুজিব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যে র‌্যাব তিনজনকে এবং পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে বাকি আসামিদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্যও সংগ্রহ করেছি।
এ মামলার পলাতক আসামি জাহাঙ্গীরসহ বাকি আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আসতে সক্ষম হবো।

এর আগে গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যার সময় পূর্ব বিরোধের জেরে কক্সবাজার পৌরসভার ৭নং ওর্য়াডের পাহাড়তলী বউ বাজার নামক এলাকায় টমটম চালক মুজিবুর রহমানকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা। মুজিবর রহমান কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নাম্বারে ওয়ার্ডের হালিমা পাড়ার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে।

হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামী করে কক্সবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ৩৩/১৩৮।
মামলার পর তিন সহোদরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রকাশ শাওন (২২), আনোয়ার হোসেন (৩৩), ইমরান হোসেন (১৯) ও মো. করিম (২৮)।

গ্রেপ্তার ৪ আসামি জেলখানার ভিতরে থাকলেও ঘটনার একমাস অতিবাহিত হবার পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে হত্যার নির্দেশদাতা জাহাঙ্গীর আলম। সে আত্নগোপনে থেকে নিহত মুজিবের পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মুজিবের পরিবার।
মামলা ও নিহত পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলার ৫ নম্বর আসামী জাহাঙ্গীর আলম ও নিহত মুজিব একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তারা পূর্ব পরিচিত ছিলো। পরিচয়ের সুবাদে তাদের কথা হতো। ওই এলাকার এক ব্যক্তির দোকান জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের করে নিলে জাহাঙ্গীরের সাথে দোকান মালিকের বিরোধ সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের পক্ষ নিয়ে মুজিবকে সাক্ষী দিতে বললে মুজিব অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর থেকে জাহাঙ্গীরের সাথে মুজিবুরের বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং মুজিবকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয় জাহাঙ্গীর।
অন্যদিকে মামলার ১ থেকে ৪ নম্বর আসামীদের সাথেও জাহাঙ্গীরের সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান মুজিবের পরিবার।
সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে মামলার ২ নম্বর আসামী মো. আনোয়ারের স্ত্রীর নামে ক্রয়কৃত একটি ইজিবাইক (টমটম) চুরি হয়ে গেলে গাড়িটির খোঁজ নিতে মুজিবকে অনুরোধ জানান আনোয়ার।

একপর্যায়ে চুরি হওয়া ইজিবাইকটি কক্সবাজারের সত্তর ঘোনা এলাকায় দেখতে পেয়ে মুজিব বিষয়টি আনোয়ারকে জানান। পরে ইজিবাইকটি ছাড়িয়ে আনতে মুজিবকে অনুরোধ জানান আনোয়ার।সেই ইজি বাইকটি মুজিবর রহমান পাঁচ হাজার টাকার চুক্তিতে সেটি চোরের কাছ থেকে উদ্ধার করে আনোয়ারের কাছে হস্তান্তর করেন।তবে আনোয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সেই টাকা পরিশোধ করেননি। মুজিব টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।

আরও জানা যায়, রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাহাড়তলি নতুন বাজার এলাকার ইয়াসিন আরাফাতের টমটম গ্যারেজে মুজিবুর রহমান অবস্থান করছিলেন। এর আগে মামলার চার নম্বর আসামী রমজান আলী মুজিবকে বাসা থেকে ডেকে আরাফাতের গ্যারেজে আসতে বলেন।গ্যারেজে প্রবেশ করতেই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পূর্ব শত্রুতার জেরে মামলার ৫ নম্বর আসামী জাহাঙ্গীরের নির্দেশ মোতাবেক আনোয়ার হোসেন ও তার দুই ভাই মোস্তফা শাওন ও ইমরানসহ কয়েকজন তার ওপর হামলা চালায়।

সিসিটিভি দেখা যায়, মুজিব এক চালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎ তিন-চারজন যুবক এসে তাকে মারধর শুরু করে। তাদের হাতে ছুরি ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। তারা মুজিবকে গ্যারেজের বাইরে টেনে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে। পরে নিহতের ছোট ভাই তারভীর ও স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় মুজিবকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement