হারুন-অর-রশিদ বাবু, রংপুর
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার মুন্সিরহাট কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। উপজেলার ৪০ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের অধিকাংশই যথাসময়ে খোলা হয় না বলে দাবি করেছেন সাধারণ মানুষজন। কোনো কোনো কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সপ্তাহে ২-১ দিন ক্লিনিকে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ তৃণমূলে পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থাপন করা হয়। এসব ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয় সিএইচসিপিদের। চাহিদা অনুযায়ী বছরে ৩-৪ বার ওষুধ দেওয়া হয়। সরকার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে টাকা খরচ করলেও সাঘাটা উপজেলাবাসী কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে গত ১৫ জুন উপজেলার মুন্সিরহাট কমিউনিটি ক্লিনিক গিয়ে দেখা যায়, সিএইচসিপি মাহ্ফুজা সকাল ১০.০৫ মিনিটে খোলেন তালা। ক্লিনিকের সামনে অপেক্ষা করছেন দুইজন সেবাপ্রত্যাশী। অনেক রোগী ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এরপর আগত সেবা গ্রহিতা মনোয়ারা বেগমকে দিয়ে ক্লিনিক পরিস্কার-পরিছন্ন করে নেন। ৬৫ উর্ধ হুরমোজ আলীকে পাঠিয়ে দিয়ে মোবাইলে ফ্লেক্সিলড নেন। মুন্সিরহাট কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্লিনার সালেহা বলেন, ঈদ উপলক্ষে সাতদিন বন্ধ ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ সিএইচসিপি মাহফুজা দেরিতে ক্লিনিকে আসলেও মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, সেবা গ্রহিতাদের সাথে আচরণ খারাপ করেন। তারা আরো বলেন, মাহফুজা সাঘাটার স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের ভাগ্নি ও বিএসসি শিক্ষকের মেয়ে এই জন্য তিনি তার ইচ্ছা মত যাওয়া-আসা করেন। তার বিষয়ে সঠিক কথাও বললে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি দেন এবং অসম্মান করেন। ক্লিনিকে সেবা গ্রহিতাদের নিকট হতে আদায় করা টাকা তিনি ব্যাংকে জমা না করে নিজের ইচ্ছামত খরচ করেন।
সেবা নিতে আসা মনোয়ারা বেগম বলেন, ৫-৬ দিন এসেও মলম পায়নি। ওই ক্লিনিকে দুপুর ১.২৮ মিনিটে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ক্লিনার সালেহার মাধ্যমে সরকারি ঔষধ কার্টুন ভর্তি করে অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সালেহা কাঁধে করে ঔষধের কার্টুনের কারণ জানতে চাইলে, তিনি বলেন এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ।
স্থানীয় হুরমোতুল্লাহ্ বলেন, ১১ টার আগে কোন দিন ক্লিনিক খোলে না আর জোহরের নামাজের আযান হলে সিএইচসিপি মাহফুজা বাড়ি যান। তবে মাহ্ফুজা বলেন, আমার মামা চেয়ারম্যান, বাবা বিএসসি শিক্ষক, পরিবারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে সমাজে। সামাজিক কিছু কাজ থাকে তাই যথাসময়ে আমি আসতে পারব না। তবে ১০ টার পর পরেই আমি আসি। টাকা ব্যাংকে জমা না করার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে মাহ্ফুজা বলেন আগামীতে জমা করব।
সালেহার মাধ্যমে কাটুন ভর্তি ঔষধ পাচারের বিষয়ে বলেন, কার্টুন ভর্তি নয়! সামান্য কিছু ঔষধ ছিল।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা: মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, সিএইচসিপি দেরিতে আসেন আর সময়ের পূর্বে চলে যান তথ্য উপাত্ত কি আছে দেন যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দুই-একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।