শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। রোগীদের কাছ থেকে অর্থ দাবি, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশেষে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে সরেজমিনে অভিযান চালিয়ে এসব অভিযোগের বেশ কয়েকটির সত্যতা পেয়েছে সংস্থাটি।
দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বুলবুলের নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত দল বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে অভিযান শুরু করে। বেশ কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযানে দুদকের কর্মকর্তারা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং রোগী, স্বজন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
অভিযান শেষে দুদক জানায়, হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুল কাইয়ুম একজন রোগীর কাছ থেকে চিকিৎসা দেওয়ার শর্তে নগদ টাকা দাবি করেন। তদন্তে ওই রোগীর কাছ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে, যা সরকারি চিকিৎসা নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এছাড়াও অভিযানে বেরিয়ে আসে রোগীদের খাদ্যসেবায় অনিয়মের চিত্র। রান্নাঘর ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত মিনিকেট চালের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে কম মূল্যের মোটা চাল। যা একদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত বরাদ্দ অপব্যবহার হচ্ছে।
দুদক সূত্র জানায়, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল চক্র সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া গেছে। দালালদের একটি প্রাথমিক তালিকা হাতে পেয়েছে দুদক, যাদের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় ও ভোগান্তি বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বুলবুল বলেন, “অভিযানের সময় সরাসরি এক রোগীর কাছ থেকে চিকিৎসকের টাকা দাবি করার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এছাড়াও সরকারি বরাদ্দের মিনিকেট চালের পরিবর্তে কম মানের চাল ব্যবহারের বিষয়েও প্রমাণ মিলেছে। হাসপাতালের দালালদের তালিকাও সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরেই নানামুখী অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমালোচিত। চিকিৎসক সংকট, ঔষধের সঙ্কট, অব্যবস্থাপনা এবং দালালদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন।দুদকের এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা আশা করছেন, অভিযানের পর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে সাধারণ মানুষ ন্যায্য চিকিৎসাসেবা পাবে এবং দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।