বিশেষ প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগাছায় ঈদ পুর্ণমিলনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে থানা পুলিশকে অতিথি করে লটারি নামক জুয়া খেলার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার নাগদাহ গ্রামে মাইকিং করে লটারির টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এতে পুরস্কারের লোভে পরে বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকেট কিনেছিল। লটারির ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা।
উপজেলার পারুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড নাগদাহ মোরে মরহুম আব্দুল বাতেনের ফাঁকা জমিতে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদের দিন থেকে সপ্তাহ ব্যাপী চলছে এ অনুষ্ঠান। “নাগদাহ নিউ জেনারেশন একতা সংঘ” কতৃক আয়োজিত এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা (মেলায়) স্টল বসেছিল প্রায় ৩০ টি। বিনোদনের জন্য ছিল নাচ গান। পাশাপাশি প্রতিদিন লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রঙিন টেলিভিশন, বাইসাইকেল, মোবাইল ফোনসহ একাধিক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘ র্যাফেল ড্র’ নাম দিয়ে লটারি জুয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে আয়োজক কমিটি। শুধু মেলা প্রাঙ্গণ নয়, মাইকিং শুনে আশপাশের গ্রামের লোকজনও লটারির টিকিট কিনছেন। পীরগাছা থানা পুলিশের অনুমতি নিয়েই এই লটারীর আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি ওই সংঘের সভাপতি আসাদুজ্জামান লিটনের। প্রতি টিকিট মুল্য ২০ টাকা। স্থানীয়রা আরও জানান, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও লটারি পরিচালনা করতে গিয়ে নাগদাহ নিউ জেনারেশন একতা সংঘের সভাপতি ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী আসাদুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তার হোসেন, সদস্য মাহাবুল ইসলাম, মানিক চৌকিদারসহ একাধিক যুবকের নেতৃত্বে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে অন্তত তিনবার। কুটিয়াল পাড়া বিরাহীম গ্রামের বাসিন্দা মো. মহসীন মিয়ার ছেলে মো. রাব্বি (১৪) কে প্যান্ডেলের বাঁশ ধরায়, বেধড়ক পিটিয়েছ আয়োজক কমিটির লোকজন।
নাগদাহ মোরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলিম উম্মাহ এসব বেহায়পনায় অতিষ্ঠ। আয়োজক কমিটির ছেলেপেলে এতোটাই বেপরোয়া যে, তারা নামাজের ওয়াক্তেও মাইক বন্ধ করেনি।
স্থানীয় মসজিদের ঈমাম মো. হোসেন আলী জানান, ঈদের দিন থেকে এলাকার লিটন, সৈদার মেম্বারের ভাতিজাসহ কয়েকজন মিলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যা করেছে এটা মোটেও কাম্য নয়। ঈদের দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে আমি অতিষ্ঠ হয়ে, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলমকে ফোন করে পবিত্র ঈদের দিনে এসব বেহায়াপনার বিষয় জানাইছি। তাকে জানানোর ১৫/২০ মিনিট পর গান বাজনা বন্ধ হলেও পরের দিন থেকে পুনরায় চালু হয় বেহায়াপনা। আমাদের প্রজন্ম ভূলে গেছে কোরবানির ত্যাগ ও মহিমা, এসব বন্ধ হওয়া জরুরী।
ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার প্রধান অতিথি উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমিসহ স্থানীয় মান্যগণ্য ও পীরগাছা থানার এসআই শাহ আলম , এস আই আলতাফ হোসেন ঈদের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলাম। ঈদের দিন রাতে উচ্চস্বরে নাচগানে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে। অনেকেই আমার কাছেও অভিযোগ করেছে তবে লটারীর বিষয়টি আমার জানা নেই।
অনুষ্ঠানের সভাপতি পারুল ইউপি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি জানতাম না এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে নাচ গান করা হবে।পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে নামাজের ওয়াক্তে মাইক বাজানো এবং অশ্লীলতা ছড়ানোর বিষয়টি এলাকাবাসী ভালোভাবে নেয়নি। লটারি বা জুয়া এগুলোর ব্যাপারে আমার জানা ছিলনা। লটারির বিষয় পরে জেনেছি, গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ আয়োজক কমিটির উপর।
পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠানের বিষয়টি ওখানকার গ্রাম পুলিশ সদস্য মানিক আমাকে জানিয়েছে, তবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নাচ গান, লটারি বা থানা পুলিশের অতিথি হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রয়োজনে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।